
( এক )
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪। আজ আনন্দবাজার পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, “টেলিমেডিসিনে ভুলে ভরা প্রেসক্রিপশন”। এই খবরে বলা হয়েছে —
“রোগী ডায়ারিয়ায় ভুগছেন। টেলিমেডিসিন প্রক্রিয়ায় তাঁকে দেখে চিকিৎসক ব্লাড কালচার টেস্ট, ইসিজি, ইউএসজি, মল এবং করোনা পরীক্ষা করতে দিয়েছেন! সাধারণ ডায়ারিয়ার সঙ্গে ইসিজি, ইউএসজি বা রক্তের কালচার রিপোর্টের কী সম্পর্ক, তা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদেরও বোধগম্য হয়নি। সতর্ক করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে।”
“গ্রামাঞ্চলের রোগীদের জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের টেলিমেডিসিন চিকিৎসায় এই রকম ভুরি ভুরি অপ্রাসঙ্গিক, ভুল চিকিৎসা, ভুল ও অপ্রয়োজনীয় ওষুধ এবং টেস্টের অভিযোগ উঠেছে। প্রচুর প্রেসক্রিপশনে নিয়ম ভেঙে জেনারিকের বদলে ব্র্যান্ড নেমের ওষুধ লেখার অভিযোগ উঠেছে সরকারি চিকিৎসকের বিরুদ্ধে”(আনন্দবাজার। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪)।
কী লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে রেখে এ ধরনের সংবাদ পরিবেশন ? টেলিমেডিসিন চিকিৎসাকে জনমানুষের কাছে মহিমান্বিত না করার পরিকল্পনা নয়তো ? জনগণ যাতে এই প্রযুক্তি নির্ভর চিকিৎসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন বা অবহেলা করেন, তার প্রচার নয় তো ?
আমরা ‘টেলিমেডিসিন চিকিৎসা’কে কমবেশী বিশ(২০) বছর ধরে জনগণের মধ্যে দক্ষতার সাথে প্রয়োগ করে চলেছি। আমরা চিকিৎসা পরিষেবার বৈজ্ঞানিক, নৈতিক, যুক্তিপূর্ণ ও মানবিক দিককে গুরুত্ব সহকারে টেলিমেডিসিন চিকিৎসায় প্রয়োগ করি। জনগণ আমাদের ফোনে ফোনে চিকিৎসা পরিষেবা সাদরে গ্রহণ করে, আমাদের ঋণী করে রাখেন !
(দুই)
হঠাৎ উহারা চিকিৎসকদের ‘টেলিমেডিসিন প্রেসক্রিপশনে’ অনাচার লইয়া চীৎকার করিতেছে কেন ?
উহারা কী কোনদিন খেয়াল করেননি যে, আমাদের দেশের চিকিৎসকদের নব্বই শতাংশ (৯০%) প্রেসক্রিপশন চরম অনাচারপূর্ণ। প্রেসক্রিপশন গুলোতে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নৈতিক, বৈজ্ঞানিক, আইনী ইত্যাদি অনাচার আকছার বা পরিপূর্ণ।
উহারা কী মানুষের হাসপাতালে কুকুরের চিকিৎসার চেষ্টা করেননি ? শাসকের পোষা কুকুরের ডায়ালিসিস করার ঘটনা বলছি !
উহাদের চিকিৎসকরা কী করোনা রোগে গাদা গাদা অপ্রয়োজনীয় ওষুধ লেখেননি ? ওই চিকিৎসকরাই জীবাণুদের এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হওয়ার জন্য কী অপাসকরা ও বেআইনী চিকিৎসকদের দায়ী করেননি ? সব তথ্য জনগণ জীবন্ত ভাবে উপলব্ধি করেছেন।
উহারা কী প্রাণঘাতী কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের প্রচার ও প্রয়োগ করেননি ? এখন আবার মেয়েদের জরায়ুর ক্যানসার রোধী ভ্যাকসিনের প্রচার চালাইতেছেন!
উহারা কী দেশের হাসপাতাল গুলোকে ‘নরক’ করে রাখেননি ?
উহারা দেশের শাসকশ্রেণীর রাজনৈতিক দল। উহারা দেশের জোতদার-জমিদার-মুৎসুদ্দি বুর্জোয়ার রাজনৈতিক প্রতিনিধি। উহারা দেশের সংসদীয় রাজনৈতিক দল। উহারা সাতাত্তর(৭৭) বছর ধরিয়া সরকার চালাইতেছে।
উহাদের শ্রেণী শাসনের অঙ্গ হিসেবে জনগণের জন্য এই সব অনাচারপূর্ণ প্রেসক্রিপশন করিতেছে। রোগব্যাধিতে জনগণকে মৃত্যু ভয় দেখানো, রোগ সৃষ্টি করা, সামাজিক বাধা সৃষ্টি, অপ্রয়োজনীয় ওষুধের প্রচার ইত্যাদিকে শাসকশ্রেণী শ্রেণী-শাসনের হাতিয়ার করিয়াছে। ইহা অসচেতন নয় ; বরং পুঁজিবাদী শাসকশ্রেণীর ঘৃণ্য চেতনায় ভরপুর !
(তিন)
চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশনের যাবতীয় অনাচারের কারণ অনুসন্ধান করিতে হইবে চলমান সমাজের চিকিৎসা বাজারের মধ্যে। দেশের চলমান আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার মধ্যে । দেশের উৎপাদন ব্যবস্থার মধ্যে। উৎপাদিত সামগ্রীর বিনিময় পদ্ধতির মধ্যে।
১৯৯২ সাল হইতে সোসাইটি ফর সোসাল ফার্মাকোলজি’র কর্মীবাহিনী নিরলস ভাবে চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশনের এই সব অনাচারের অনুসন্ধান, গবেষণা, বিশ্লেষণ ও ফলাফল, চর্চা ও গণপ্রচারের কাজে নিষ্ঠার সাথে করিয়া আসিতেছে ।
কারণ আমাদের দেশে চিকিৎসা ‘পণ্য’। ওষুধ ‘পণ্য’ । চিকিৎসা পরিষেবা হচ্ছে ‘চিকিৎসা বাজার’। দেশের চিকিৎসা বাজারের একমাত্র চালিকা শক্তি হচ্ছে চিকিৎসা ব্যবসায়ীদের পুঁজি ও মুনাফার আকাঙ্খাপূরণ !
দেশের মানুষের জীবনের বিনিময়ে মুনাফা ও পুঁজি চাই। এই নোংরা স্বার্থ পূরণের অঙ্গ হিসেবে চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশনে যাবতীয় অনাচার ! আমাদের মনে রাখতে হবে, উহাদের ‘গাজোয়ারী প্রেসক্রিপশন-অনাচার’ যে, শ্রেণী শাসনের অঙ্গ !
……………………………………………………………………………………..
স্বপন জানা। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪। কলকাতা।
সৌজন্য : সোসাইটি ফর সোসাল ফার্মাকোলজি।