
সুধী,
আমাদের দেশে পেশাগত রোগ একটি উপেক্ষিত বিষয়। অথচ পেশার কারণে শারীরিক কোনো ক্ষতি হলে আইনত ক্ষতিপূরণসহ চিকিৎসা পাওয়ার পূর্ণ অধিকার আছে। যা প্রায়শই অজ্ঞাত এবং অনুচ্চারিত থাকে। এই পরিস্থিতিতে শ্রমজীবী হাসপাতাল ও নাগরিক মঞ্চ উদ্যোগ নিয়েছে, একটি পেশাগত রোগ নির্ণয় কেন্দ্র চালু করার। যে কেন্দ্রের কাজ হবে পেশাগত রোগ নির্ণয় করা ও তার চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া এবং আইনী সহায়তা করার।
যে কেন্দ্রের নাম দেওয়া হয়েছে:
ডাক্তার রণজিৎ ঘোষ পেশাগত রোগ নির্ণয় কেন্দ্র
শ্রমজীবী হাসপাতাল, বড়বেলু, বেলুমিল্কী, শ্রীরামপুর, হুগলী ৭১২২২৩।
পেশাগত রোগ কাকে বলে?
পেশাগত রোগ হল সেই সব রোগ বা ব্যাধি যা পেশাগত কাজ বা জীবিকার কারণে হয়।
পেশাগত রোগ কি করে হয়?
পেশাগত রোগ বিভিন্ন জৈবিক, রাসায়নিক, শারীরিক এবং মনস্তাত্ত্বিক কারণের ফলে হয় যা কাজের পরিবেশে বা, কাজের ধরনের মধ্যে উপস্থিত থাকে।
পেশাগত রোগ নির্ণয় খুব কম ক্ষেত্রেই শুধু ক্লিনিক্যাল ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। শ্রমিক কোথায় কাজ করেন সেটা জানা বা জানানো তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কোন পেশাগত রোগ ভারতে বেশি হয়?
WHO-এর মতে, ভারতে প্রধান পেশাগত রোগ/অসুস্থতা হল সিলিকোসিস, গ্রন্থি বা পেশীর আঘাত, কয়লা কর্মীদের নিউমোকোনিওসিস, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ লাং ডিসিস, অ্যাসবেস্টোসিস, বাইসিনোসিস, কীটনাশক বিষক্রিয়া এবং শব্দের কারনে শ্রবণশক্তি হ্রাস, ইত্যাদি।
ডাক্তার রণজিৎ ঘোষ পেশাগত রোগ নির্ণয় কেন্দ্র (ODDC) কেন খোলা হলো?
কয়েক দশক ধরে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে পেশাগত রোগ নির্ণয় কেন্দ্র খোলার। এযাবৎ বেলুড় ই এস আই এবং জোকা ই এস আই সি বাদ দিলে আর একটাও পেশাগত রোগ নির্ণয় কেন্দ্র খোলা হয়নি। এবার তাই সময় এসেছে আমাদের এই উদ্যোগ নেওয়ার!
পেশাগত রোগ নির্ণয় কেন্দ্র (ODDC)-র গঠন ঠিক কেমন হবে, কিভাবে চলবে সেটা?
ODDC-এর কেন্দ্রে থাকবে মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনার দ্বারা পরিচালিত এই ডিটেকশন ক্লিনিক, যার তত্ত্বাবধানে থাকবেন একজন সিনিয়র অভিজ্ঞ কনসালট্যান্ট। এছাড়াও, বেশিরভাগ ক্লিনিকের দিনে একজন শ্রম অধিকার কর্মী উপস্থিত থাকবেন। উপরন্তু, একজন শ্রম আইন অনুশীলনকারী
মাসে অন্তত একবার ক্লিনিকের দিনে উপস্থিত থাকবেন ।
শ্রীরামপুরের শ্রমজীবী হাসপাতাল থেকে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ থাকবে। সেই ওয়ার্কিং গ্রুপে আরো থাকবেন নাগরিক মঞ্চের কয়েকজন কর্মী ও সহযোগী; সক্রিয় ট্রেড ইউনিয়নের কিছু কর্মী, পেশাগত রোগে আক্রান্ত বা উদ্বিগ্ন মানুষ জন; শ্রমজীবী হাসপাতালের অন্যান্য ইউনিটের কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক; স্বতন্ত্র ট্রেড ইউনিয়নের এবং কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা যারা সক্রিয়ভাবে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের সাথে জড়িত; এবং কয়েকজন আইনি পেশাদার যারা সক্রিয়ভাবে শ্রম অধিকারের সাথে জড়িত।
শুরুতে যে কারখানায় আমাদের ভালো যোগাযোগ আছে সেখান থেকে শ্রমিকদের কয়েকজনকে সঙ্গে নেবার চেষ্টা করতে হবে। এই শ্রমিকদের শ্রীরামপুর শ্রমজীবীর ODDC-তে আনতে হবে…তাদের পরীক্ষা করা হবে এবং সেখান থেকে শুরু হবে ODDC-র যাত্রা ।
পেশাগত রোগ নির্ণয় কেন্দ্র (ODDC) কবে ও কখন চালু থাকবে?
প্রতি বৃহস্পতিবার, সকাল 10:30 থেকে 12:30।
স্থান: শ্রমজীবী হাসপাতাল, বড়বেলু, বেলুমিল্কী, শ্রীরামপুর, হুগলী
(শেওড়াফুলি স্টেশন থেকে অটোতে 15 টাকা, মিনিট কুড়ির রাস্তা)
স্বল্প মেয়াদী লক্ষ্য
ফুসফুস সম্পর্কিত রোগ এবং শব্দের কারনে শ্রবণশক্তি হ্রাস, ODDC-র এই দুটি প্রধান ফোকাস হবে শুরুতে; বিভিন্ন শ্রমজীবী হাসপাতালের সাথে যুক্ত মেডিক্যাল এবং প্যারা-মেডিক্যাল পেশাদারদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ; সাপ্তাহিক ক্লিনিকের দিনে শ্রম অধিকার কর্মী এবং শ্রম আইন অনুশীলনকারী আইনজীবী এবং সামাজিক স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে ধারাবাহিক সমর্থন আদানপ্রদান-এর ব্যবস্হা করা।
দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্য
রোগীর পেশা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানা, প্রাসঙ্গিক লক্ষণগুলি লক্ষ্য করা এবং পেশাগত রোগের একটি প্রাথমিক নির্ণয়ে পৌঁছানো, যা ‘রোগীর’ বলা কর্মক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত। এটি হল মূল চাবিকাঠি।
এরপর রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা এবং চিকিৎসা পদ্ধতি নিশ্চিত করা যেতে পারে।
ODDC-র সাথে সংযুক্ত শ্রম কর্মী এবং শ্রম আইন অনুশীলনকারীরা তারপর নিয়ম অনুযায়ী, ইএসআই এবং নন-ইএসআই রোগীদের চিকিৎসা, অসুস্থতার সুবিধা এবং পুনর্বাসনের জন্য পরামর্শ, তথ্য সরবরাহ ও সহায়তা করতে পারেন। ক্ষতিপূরণযোগ্য রোগের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দাবি ও ক্ষতিপূরণ আদায় করতে শ্রমিকদের সহায়তা অবশ্যই একটি লক্ষ্য।
সবশেষে, রোগীর উল্লিখিত কর্মক্ষেত্রের (যেখানকার শ্রমিক পেশাগত রোগে আক্রান্ত) অন্যান্য পেশাগত রোগীদের চিহ্নিত করা, নিরাপত্তার মান এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জামের মান ও সরবরাহে ত্রুটি বিচ্যুতি খুঁজে দেখা এবং কাজের প্রক্রিয়া পরিবর্তনের জন্য হস্তক্ষেপ করা।
এখানে মনে রাখা দরকার পেশাগত অসুস্থতা অনেকাংশে কমানো যায় যদি কাজের জায়গার পরিবেশ অনুকূল থাকে, যথোপযুক্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম নিয়ে কাজ করা যায়।
কাজের জায়গার সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে অনেক আইন আছে। কিন্তু তার প্রয়োগ নেই।
পেশাগত অসুস্থতা নিয়ে তাই শ্রমিকদেরই কথা বলতে হবে। দাবি জানাতে হবে। কারণ শ্রমিকের কাজের পরিবেশকে সুস্থ ও দূষণমুক্ত রাখতে পারলে আরো বেশি দিন তারা কর্মক্ষম থাকতে পারবেন।
এটা চালাতে আপনারা কি ভাবে সাহায্য করবেন?
সরকার তো দায়িত্ব নেয় না। তাহলে মালিকরাই বা কেন দায়িত্ব নেবেন? অনেক শ্রমিক ভাবে পেশাগত রোগ ধরা পড়লে, তাদের বসিয়ে দেওয়া হবে কাজ থেকে। বেশিরভাগ ছোট-মাঝারি শ্রমিক সংগঠনের অনেক নেতাই জানেন না পেশাগত রোগ খায় না মাথায় দেয়।
তাহলে আপনি কতটুকুই বা করতে পারবেন?
আসল কাজ কিন্তু পেশাগত রোগীদের পেশাগত রোগ নির্ণয় কেন্দ্রর সাথে (ODDC) যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া। সেই সেতুবন্ধে আপনার নুড়ি বওয়া এই উদ্যোগের আসল শক্তি হবে। চোখ-কান-যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে সজাগ থাকুন। পেশাগত রোগ সন্দেহ করার কারণ থাকলেই আপাত দৃষ্টিতে সুস্থ বা অসুস্থ, কাজে আছেন বা বসে যাওয়া, শ্রমজীবী মানুষটিকে পেশাগত রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে নিয়ে আসুন বা পাঠিয়ে দিন।
বাকি কাজ আমাদের সাধ্য মতন করবো যখন যতটা পারি।
মোবাইলে যোগাযোগ : গৌতম সরকার – 9477484833 | নব দত্ত – 9831172060 | কমল তিওয়ারি – 9903592064 | দেবাশীষ পাল – 7003763583 | অমল সেন – 9432110272 | শুভদীপ ভট্টাচার্য – 9836326555 | পৃথ্বীশ বোস – 9434101154 |
_________________
নাগরিক মঞ্চের পক্ষে পবন মুখার্জি কতৃক 134 রাজা রাজেন্দ্র লাল মিত্র রোড, কলকাতা 700085 হইতে প্রকাশিত ।