Posted on: May 22, 2025 Posted by: Editor Desk Comments: 0
Spread the love

জয়ন্ত বিষ্ণু নারলিকর 

(১৯ জুলাই ১৯৩৮ – ২০ মে ২০২৫)  জন্মস্থান: কোলহাপুর, মহারাষ্ট্র ।

জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং ইন্টার-ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের এমেরিটাস অধ্যাপক।

মা, সুমতি নারলিকর ছিলেন সংস্কৃত ভাষার পণ্ডিত। বাবা, বিষ্ণু বাসুদেব নারলিকর, বিশিষ্ট গণিতজ্ঞ ও পদার্থবিজ্ঞানী, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।  

মামা, বসন্ত শঙ্কর হুজুরবাজার, পরিসংখ্যানবিদ ছিলেন। তিনি প্রতিদিন একটি গাণিতিক সমস্যা বোর্ডে লিখে রাখতেন, সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সেটি মুছতেন না। এভাবে, ছোটবেলা থেকেই নারলিকর গাণিতিক চিন্তা ও সমস্যা সমাধানে অভ্যস্ত হন । 

মা, বাবা ও মামার প্রেষণা ও উৎসাহে গণিতের প্রতি নারলিকরের আগ্রহ জন্মায়। তার বিদ্যালয়ের নাম ছিল সেন্ট্রাল হিন্দু কলেজ বর্তমানে সেন্ট্রাল হিন্দু বয়েজ স্কুল । প্রিয় শিক্ষক ফ্রেড হোয়েল।

ছবি: শিশু জয়ন্ত বিষ্ণু নারলিকর

“একা নই কেউ”

তুমি তো একা নও মহাবিশ্বে;

ছিলে ভিড়ে ঠাসা ঠাসি বিশ্বে, 

অনুভব করেছো তাদের উপস্থিতি ;

প্রতিটি কণা হয়তো চেয়েছিলো তোমাকে। 

তুমি একা নও; তোমার থাকা, ভালোলাগা কিংবা 

রাগ-অনুরাগ সব কিছুই অন্যদের অস্তিত্ব, অনুভূতি অনুসারে চলে – এ কথা তুমি গেছ বলে। 

জয়ন্ত নারলিকর ও ফ্রেড হয়েল তত্ত্ব বলে-

মহাবিশ্বের প্রতিটি কণার ভর, ঐ কণার চারপাশের সব কণার ভরের মান অনুযায়ী ঠিক হয়। মানে প্রতিটি কণা অপর কণার বশ। 

তোমার, তোমাদের কথা, চিন্তা; আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার কথা ও আর্নস্ট ম্যাকের কথাকে যেন এক করে বলে-

“স্থানীয় পদার্থের গতি সারা মহাবিশ্বের সাথে সম্পর্কিত”। 

জয়ন্ত বিষ্ণু নারলিকর, যদিও তোমার, তোমাদের কথা,

এখনও ওদের, মানে বিজ্ঞানীদের মনোমত হয়নি,

তবুও আমার মতো অতি এক ক্ষুদ্র কণা বলে-“তোমাদের কথা মহাবিশ্বের গঠন এবং মহাকর্ষের প্রকৃতি সম্পর্কে আমাদের ধারণা পরিবর্তন করতে চায়। 

সবই পরিবর্তনশীল, একদিন মেনে নেবে সবাই”। 

আমরা যাত্রী সব একই তরণীর,

আমাদের ভারে নৌকা দোলে, 

তরণীর তালে জল দোলে, 

জলের ঢেউয়ে তরণী চলে। 

আমি, তুমি, তরণী, জল, নদী একাকার- 

কেউ নই একাকী। 

আমরা যাত্রী সব একই তরণীর। 

জয়ন্ত বিষ্ণু নারলিকর, আজ তুমি তারাদের পথে, 

আমরা কেউ নয় একা, 

প্রত্যেকে অনেকের মাঝে,

বিশ্ব পথে।। 

২০০১ সালের জানুয়ারি মাসে এক অনুষ্ঠানে বিড়লা প্ল্যানেটেরিয়ামে। বাঁদিক থেকে অশোক রাউত (প্রয়াত),ডা. সুকান্ত মুখার্জি, অধ্যাপক জয়ন্তবিষ্ণু নারলিকার, শৌভিক নাথ ও ডা. শঙ্করকুমার নাথ।

জ্যোতির্বিজ্ঞানী, মহাবিশ্বতত্ত্ববিদ এবং ইন্টার-ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের এমেরিটাস অধ্যাপক, জয়ন্ত বিষ্ণু নারলিকার।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাস্থানঃ সেন্ট্রাল হিন্দু বয়েজ স্কুল, বেনারস। তার অসাধারণ গণিতপ্রতিভা সকলের নজর কাড়ে।

১৯৫৭: গণিতে স্নাতক [প্রথম স্থান (B.Sc.)], মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়। 

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি, যুক্তরাজ্যে যান ও বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্রেড হয়েলের তত্ত্বাবধানে পড়াশোনা করেন।

১৯৫৯: গণিতে স্নাতকোত্তর(প্রথম স্থান)।

১৯৬০: কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে মেধাবী গণিতবিদ সম্মান Smith’s Prize পান।

১৯৬৩: কেমব্রিজ থেকে পিএইচডি,গবেষণার বিষয়ঃ মহাবিশ্বের গঠন এবং কসমোলজি।

কেমব্রিজে সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, ফ্রেড হয়েলের সঙ্গে মিলে হয়েলে– নারলিকার থিয়োরি অফ গ্রাভিটি প্রস্তাব করেন।

১৯৭২: ভারতে ফিরে টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ এ যোগ দেন।

২০১৮ সালে আকাশবানী শিলিগুড়িতে প্রফেসর জয়ন্ত বিষ্ণু নারলিকার এবং তাঁর স্ত্রী ডঃ মঙ্গালা নারলিকার সাথে ডঃ মানসপ্রতিম দাস। 

পরে ইন্টার ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের প্রতিষ্ঠা করেন এবং বহু বছর এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি ২০ মে, ২০২৫ ভারতের পুনের নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন। বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তিনি শান্তভাবে ঘুমের মধ্যেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

মহাবিশ্বে রইলো জয়ন্ত নারলিকার ও ফ্রেড হোয়েলের মহাবিশ্ব তত্ত্বঃ এই বিশ্ব চিরন্তন, এর কোনও শুরু বা শেষ নেই। এটি বারবার প্রসারিত ও সংকুচিত হয় আর মাঝে মাঝে এক বিশেষ শক্তিক্ষেত্র, সি-ফিল্ড (Creation field) এ নতুন পদার্থ উৎপন্ন হয়। মহাবিশ্বের প্রতিটি কণার ভর নির্ধারিত হয় অন্য সব কণার উপস্থিতির দ্বারা। মানে, কেউ একা নয় — সবাই একে অপরের বশ, একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত।

এই তত্ত্বের প্রতিচ্ছবি যেন আমরা নিজেরাও:

“আমরা যাত্রী সব একই তরণীর,

আমাদের ভারে নৌকা দোলে,

তরণীর তালে জল দোলে,

জলের ঢেউয়ে তরণী চলে।

আমি, তুমি, তরণী, জল, নদী একাকার —

কেউ নই একাকী।”

আধুনিক পর্যবেক্ষণ যেমন, কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন ও হাবল টেলিস্কোপের তথ্য বিগ ব্যাং তত্ত্বকে বেশি সমর্থন করে। তাই আজকের মূলধারার বিজ্ঞানীরা নার্লিকারের তত্ত্ব গ্রহণ করেননি। তবে এর ভাবনা ও সৌন্দর্য, আমাদের মনে নতুন ভাবনার পথ দেখায়।

লেখক:

 অসীম বসাক, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, বিজ্ঞান প্রাবন্ধিক, বিজ্ঞান প্রচারক, অভিনব রসায়ন ল্যাবরেটরি প্রণেতা, গানে ছড়ায় ‘ঘরে ঘরে রসায়ন’ একক অভিনয়। 

ইমেইল:asimkrbasak@gmail.com

ফোন:9432773785

[পাঠকের প্রতি বিশেষ অনুরোধ লেখাটি পড়ে অবশ্যই মূল্যবান মতামত কমেন্ট বক্সে দেবেন ।]


Spread the love

Leave a Comment