Posted on: May 20, 2025 Posted by: Editor Desk Comments: 0
Spread the love

ভাষা শহীদ

লেখক : অজয় নাথ

আজ ১৯শে মে ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ। চৌষট্টি বছর আগে আজকের দিনেই ঘটেছিল সেই ঘটনা। ভরতের একটি রাজ‍্য আসামের বরাক উপত‍্যকার শিলচর শহরে এগারো জন মানুষ প্রণ হারিয়েছিলেন পুলিশের গুলিতে। তখন সেভেন সিস্টারস ছিলোনা। ছিলো N E F A এবং আসাম। সেটা ১৯৬১ সাল। আসামের বরাক উপত‍্যকায় একটিই জেলা ছিল। নাম কাছাড়। শিলচর ছিল জিলা সদর। জেলার ৮০ শতাংশ মানুষ ছিলেন বাংলা ভাষী। দিন দশেক আগেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম শতবর্ষ পুর্তি উৎসব ধুমধাম করে পালিত হয়েছে। কিন্তু বিগত ছ’সাত মাস ধরে একটি আন্দোলন দাঁনা বাঁধছিল যা পরবর্তী সময়ে বরাক উপত‍্যকার ভাষা বা মাতৃভাষা আন্দোলন নামে পরিচিত হয়েছে।

ভাষা বা মাতৃভাষার দাবি নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে বহুদিন থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। আন্তর্জাল ঘেঁটে যে তথ‍্য পাওয়া যায় তাতে ভাষার দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায় দেড়শো বছর আগে ১৮৭৫ সালে। বিভিন্ন সময়ে কখনও ডেনিস কখনও স্পেনিশ ভাষার বিরুদ্ধে। ১৯৯০ সালে বর্ণবিদ্বেষ শেষ হওয়ার পর ইংরেজী ভাষা সহ এগরোটি ভাষা স্বিকৃত রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। 

তার পরের আন্দোলন হয়েছে বিহারের মানভূম জেলায়। হিন্দি এবং বাংলা ভাষার প্রতিষ্ঠা নিয়ে । স্বাধীনতার সময় থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্তু চলেছে সেই আন্দোলন। শেষ পর্যন্ত মানভূম জেলার পুবের অংশ জুড়ে দেওয়া হয় পশ্চিমবঙ্গের সাথে যার নাম হয় পুরুলিয়া জেলা । পরের আন্দোলন পূর্বপাকিস্তানে বর্তমান বাংলাদেশে। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি জনা কয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন ছাত্রের মৃত‍্যু হয়। এই আন্দোলন ছিল পাকিস্তানের রাজ ভাষা উর্দুর বিরুদ্ধে বাংলা ভাষার প্রতিষ্ঠা নিয়ে। প্রথমে আন্দোলন ছিল ছাত্রদের পরে তা জনগণের আন্দোলনে পরিনত হয়। শেষে এই আন্দোনের হাতধরে শুরু হয় ভারত পাকিস্তানের যুদ্ধ। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ নামের এক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্তানের ৯৩ হাজার সৈন‍্য ভারতীয় সেনার কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ‍্য হয় । শেষ পর্যন্ত লাভের লাভ কিছু হয়েছে কী ? বর্তমান বাংলাদেশের পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বলাই যায় বাংলাদেশ একটি ইসলামী মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিনত হয়েছে। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে ১৯৫২ সালের আন্দোলনের জন‍্যই রাষ্ট্রসঙ্ঘ ২১ফেব্রুয়ারি দিনটি বিশ্ব মাতৃভাষা দিবসের স্বিকৃতি দিয়েছে। বর্তমানে পাকিস্তানের বালুচরা যে স্বাধীনতা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তার মূলেও রয়েছে মাতৃভাষার দাবী।

১৯৬১ সালের সেই ভাষা আন্দোলন যে সর্বোভারতীয় স্তরে বিশেষ কোনও দাগ ফেলেনি তার বড় কারণ এই আন্দোলন ছিল রাজ‍্যের মধ‍্যে এবং গনমাধ্যম তত জোরালো ছিলনা । আন্দোলনও দীর্ঘদিন চালাতে হয়নি। এক বছরেরের মধ‍্যেই আসাম সরকার কাছাড়ের বাংলা ভাষার দাবী মেনে নিয়ে বাংলাকেও কাছাড়ের সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে দেয়। সেই সময় আসাম রাষ্ট্রীয় স্তরে একটি অবহেলিত রাজ‍্যেই ছিল। পশ্চিমবঙ্গেও এই আন্দোলনের ঢেউ এসে লাগেনি। কলকাতার মানুষ তখন ২১শে ফেব্রুয়ারি নিয়ে বেশি আপ্লুত ছিল। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন‍্য এবারের ২১ ফেব্রুয়ারির ভাষা শহীদ দিবস সেভাবে পালিত হয়নি। আজ কলকাতার অনেক জায়গাতেই ১৯শে মের ভাষা সহীদ দিবস পালিত হয়েছে। দু জায়াগা থেকে আমার কাছে নিমন্ত্রন এসেছে। আমার যাওয়া হয়নি শারীরিক অপারগতার জন‍্য। ১৯মে বরাক উপত‍্যকার মানুষের কাছে শুধু একটি দিন নয় একটি আবেগের নাম। এখন কলকাতার বাঙালির মনেও সেই আবেগ সঞ্চারিত হচ্ছে।

[পাঠকের প্রতি বিশেষ অনুরোধ লেখাটি পড়ে অবশ্যই মূল্যবান মতামত কমেন্ট বক্সে দেবেন ।]


Spread the love

Leave a Comment