Posted on: July 13, 2024 Posted by: Editor Desk Comments: 0
Spread the love

     ১০ জুলাই ২০২৪। জয়রামপুর । হুগলী।

       আজ হুগলী জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কলকাতা থেকে কমবেশী পঞ্চাশ কিমি দূরে, গড়ে উঠলো ‘গ্রামীণ চিকিৎসক’ প্রসেনজিৎ খাঁড়ার(২৭) চিকিৎসা পরিষেবা কেন্দ্র। আমাদের দেশের ‘চিকিৎসা বাজারে’র এক বেআইনী উদ্যোগ। মেডিকেল কলেজে পা না-রাখা এক কলা বিভাগের যুবকের ডাক্তার হয়ে ওঠার জীবন্ত কাহিনী। সামন্ত-রাজের ‘শিক্ষা-শৃঙ্খল’ ছিঁড়ে বেরিয়ে আসার ইতিহাস।

          প্রসেনজিত খাঁড়ার (২৭) জন্ম বেলবাঁধ, চাঁপাডাঙ্গা, হুগলীর এক গ্রামে। পিতার নাম দিলীপ খাঁড়া। পেশায় মধ্য-কৃষক । নিজেদের জমিতে নিজস্ব শ্রমে চাষবাসের কাজ হয়। সারা বছরের খাবার, জামাকাপড়, শিক্ষা ও চিকিৎসার প্রয়োজন মিটে যায়। 

             মা একজন গৃহবধূ। এক ভাই এক বোন । উচ্চ মাধ্যমিক কলা বিভাগে পড়াশোনার পর প্রসেনজিতের জীবনের প্রথম ইচ্ছা ছিল বেসিক ট্রেনিং নিয়ে প্রাইমারিতে চাকরি করবে। প্রায় দুই লক্ষ টাকা খরচ করে বেসরকারি কলেজে ট্রেনিং নিয়ে হতাশায় ভুগতে ভুগতে বিএ ক্লাসে ভর্তি হন। 

                        হতাশার মারণ বিষ ছড়ায় ওঁরা 

                        সাজায়ে কত রকমারি কথামালা

                         অমৃত দিয়ে আটকাবে তারে

                         গড়বে নব জীবনের উর্মিমালা !

             বাবা-মায়ের সাথে কৃষকের কাজ করতে করতে বিএ ক্লাসের পড়াশোনা । গ্রাজুয়েশন শেষ করে সম্পূর্ণ ব্যাংকে (বেসরকারি ) কাজের সুযোগ আসায় কাজ করতে থাকে । ঋণ দেওয়া নেওয়ার কাজ করতো। 

          কাজটা আসলে, মালিকের ঋণজালের তদারককারী ! অভাবীদের টোপ দিয়ে ঋণের ফাঁদ পাতার শিকারী ! ফাঁদ ছিঁড়লে, তার সারাইকারী ! এক কথায় শিক্ষিত বেকার যুবকদের দিয়ে ব্যাংক মালিকের শাসন ও শোষণের পাহারাদারীর কাজ।

       কাজের বিশাল চাপের তুলনায় আয় ছিল খুব নগণ্য। এক বছর এই কাজ করার পর হতাশায় ভুগতে ভুগতে বাধ্য হয়ে চাকরি ছেড়ে দিয়েছিল।

                  ঋণের জালের শক্ত বাঁধন খুলে

                  তোরা পালিয়ে এলি কেমন করে

                  ভাগ বসালি লক্ষ প্রাণের যন্ত্রণাতে 

                ‘রাজা’র রক্ত-চোখে আঙুল তুলে।

                                           *

         বাড়ির ডাক্তার হিসেবে আমার (কিংশুক মাঝি- লেখক) সাথে প্রথম কথা হয় প্রসেনজিতের মায়ের । “তুমি এত ছেলে মানুষ করছো, আমার ছেলেকে মানুষ করে দাও না।” প্রসেনজিতের আগ্রহ আর মায়ের অনুরোধ এড়িয়ে যেতে পারলাম না। ‘বিকল্প মেডিকেল শিক্ষা পাঠক্রমে’র ক্লাস, ডা. নর্মান বেথুন চলমান মেডিকেল স্কুলের ক্লাস, সাথে সাথে আমার কাছে থাকা , তারপর ‘রাতজাগা গ্রাম’, বিশ্বজিৎ দার কাছে কাজ শেখা। বাড়ীতে থেকে প্র্যাকটিক্যাল শিখে আজকে রোগী পরিষেবা কেন্দ্রের শুভ উদ্বোধন করলো । বেআইনি কাজের মধ্যে থেকে জনমানুষের ঋণ পরিশোধের অঙ্গীকার গ্রহণ এবং আগামী দিনে ওষুধ বাজারসহ চিকিৎসা বাজারের অনাচারের বিরুদ্ধে প্রসেনজিত লড়াই করবে — এ আশা ভরসা আমাদের আছে । প্রসেনজিতকে অভিনন্দন।’

               দেশের চিকিৎসা পরিষেবা বাজারে

              তোমাদের প্রেসক্রিপশনের জন্ম হবে 

              যন্ত্রণা উপশমের হাজারো কথা বলবে 

              চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাজ-চলা জ্ঞানে

              চিকিৎসা বিজ্ঞানের নীতিমালা মেনে।

                                    *

       গোঘাট ব্লকের গ্রামীণ চিকিৎসক প্রিয় মনোরঞ্জন রায় তাঁর অভিনন্দন বার্তায় লিখেছেন, ‘আন্তর্জাতিক কাজে অংশগ্রহণ আপনার মানবতাবাদকে জাগ্রত করবে। মতাদর্শে টিকে থাকার লড়াই খুবই কঠিন কিন্তু প্রসেনজিত যেভাবে ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে এগিয়ে এলেন, সেখানে পিছিয়ে যাওয়ার পথ নেই। “হয় বীরের মতো লড়তে হবে , নয়তো কুকুরের মতো মরতে হবে।” 

             বীরের মতো বেথুন আলোয় আলোকিত হয়ে অন্নদাতার ঋণশোধ করতে হবে। চিকিৎসা বাজারের লাগামহীন অনাচারের বিরুদ্ধে দাঁতে দাঁত চেপে সংগ্রামের আজীবন সৈনিক হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করে তুলতে হবে। ‘বিকল্প মেডিকেল শিক্ষা পাঠক্রম’, সংগঠনের আদর্শ, নীতিমালা প্রয়োগের কেন্দ্রবিন্দু — এই উপলব্ধি করতে হবে। 

             আপনি যে শ্রেণী থেকে উঠে এসেছেন, সেই অন্নদাতা কৃষকের সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরে রোগী পরিষেবা দিতে হবে এবং ডা. নর্মান বেথুন চলমান মেডিকেল স্কুলের আজীবন ছাত্র হয়ে থাকতে হবে।

                  ‘চাষা’র ছেলের চিকিৎসা বিজ্ঞান চর্চায় 

                 থাকবে মাটি-ঘামের গন্ধভরা সুগন্ধি

                  সব মানব চেতনায় আনবে সেদিন 

                  মহান অন্নদাতার সিংহাসন খানি

                  বসবে দুনিয়ার বদ্যিরাজের পাশে।     

                                           *

           অনেক উচ্চশিক্ষিত যুবক-যুবতীরা সামাজিক চলমানতায় ধাক্কা খেয়ে ‘বিকল্প মেডিকেল শিক্ষা পাঠক্রমে’র ক্লাসরুমে আসছেন। অন্নদাতা কৃষক ও কারিগরের গবেষণাগারে নতুন ভাবে জীবন শুরু করতে চলেছেন। রূরাল মেডিকেল প্রাক্টিশনার্স এসোসিয়েশনের নেতৃত্বে ‘গ্রামীণ চিকিৎসক’ হয়ে উঠছেন। আগামী দিনে তাঁরা আন্তর্জাতিক মানবতাবাদের মূর্ত প্রতীক ডা.বেথুন আদর্শে নিজেদের উদ্ভাসিত করবেন। সোসাইটি ফর সোসাল ফার্মাকোলজি’র কর্মীবাহিনী এই যুবক-যুবতীদের সশ্রদ্ধ অভিবাদন জানায়।

                          “বিশাল সাগর পার হবার জন্য

                           নির্ভর করি কর্ণধারের উপর” 

                           জনস্বাস্থ্যের জন্য নির্ভর করি 

                           আরএমপিএ’র কর্মসূচির উপর !    

                                             —- 

ঋণ স্বীকার : (১) শ্রদ্ধেয় ‘গ্রামীণ চিকিৎসক’, কিংশুক মাজি। ডা.নর্মান বেথুন চলমান মেডিকেল স্কুলের রাজ্য পরিচালক।

(২) আমাদের প্রিয় ‘গ্রামীণ চিকিৎসক’ মনোরঞ্জন রায় । গোঘাট । হুগলী।

(৩) শ্রদ্ধেয় রাজ্য সম্পাদক ‘গ্রামীণ চিকিৎসক’ বিশ্বজিৎ শাসমল। রূরাল মেডিকেল প্রাক্টিশনার্স এসোসিয়েশন।

———————————————————-

স্বপন জানা । ১১ জুলাই ২০২৪। কলকাতা।

সৌজন্য : সোসাইটি ফর সোসাল ফার্মাকোলজি।


Spread the love

Leave a Comment