Posted on: June 16, 2025 Posted by: Editor Desk Comments: 0
Spread the love

প্রতি বছর সাড়ম্বরে ভারতে শিশু দিবস উদযাপিত হয়। কিন্তু ভারতের শিশুরা কেমন আছে ? আমরা যারা শহরে বাস করি, তারা কি কখনো এ বিষয়ে খোঁজ নিয়েছি, বা এ বিষয়ে আমাদের চারপাশে যে সব ঘটনা ঘটে যায়, সে সব কিছু দেখার চেষ্টা করেছি ? একটু নজর করলেই চোখে পড়ে ১০ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুরা কাঁধে একটা থলে নিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। এরা কী করছে? এরা রাস্তা থেকে ভাঙা সামগ্রী, প্লাস্টিক, কাগজ, কাঠের টুকরো ইত্যাদি কুড়াচ্ছে। এরা কুড়ানি। এদের জন্য আমরা কেউ কখনো কি কিছু ভাবি ? এবারে চোখ ফেরাই ইটখোলার দিকে। সেখানে হাজার হাজার শিশু পরনে শতচ্ছিন্ন কাপড়, বিনা তেলে মাথার চুলে জট, অসুস্থ শরীর, সরকারি বিদ্যালয়ে প্রবেশের অধিকারহীন এইসব শিশুরা ভোর পাঁচটায় উঠে প্রত্যেক দিন ১০ থেকে ১৫টা ইট এনে ইটের পাঁজা তৈরি করে। এই ১০ থেকে ১৫টা ইট এনে ইটের পাঁজায় রাখলে তারা প্রতিবার এক টাকা করে পায়। এই আমাদের ভারত।

ভারতের শিশুদের প্রায় এক তৃতীয়াংশ রাতের বেলায় অভুক্ত অবস্থায় ঘুমাতে যায়। আন্তর্জাতিকভাবে শিশু দিবস উদযাপিত হচ্ছে। জাতিপুঞ্জ থেকে পরিবেশের সঙ্গে শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হচ্ছে। আমাদের দেশে নানান রাষ্ট্রীয় নেতার জন্মদিন উপলক্ষ্যে শিশু দিবস পালন করা হতো। কিন্তু শিশুরা তাদের স্বাস্থ্যের অধিকার, শিক্ষার অধিকার, অন্নের অধিকার কিছুই পেল না।

কিছুদিন আগে অন্তরবীক্ষণ নামে এক সেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে এক ইটখোলায় গিয়েছিলাম। এই সংস্থাটি সেখানে শিশুদের পড়াশুনোর জন্য নানান শিক্ষাসামগ্রী দান করে। সেখানকার বিবর্ণ শিশুদের যখন বলা হলো একটি গান করতে, তারা যে গানটি গাইলো তা হল ভারতের জাতীয় সংগীত। কিন্তু ভারতের কি কেন্দ্র কি রাজ্য, কোন সরকারই শিশুদের শিক্ষার অধিকার আইন থাকা সত্ত্বেও তা যথাযথ কার্যকরী করতে আজও ব্যর্থ। শিক্ষার অধিকার শিশুদের মৌলিক অধিকার।

শিশু শ্রমিক নিয়ে শ্রম দপ্তরেও আলোচনা হয়েছে। আরো অনেক মিটিং হবে। কিন্তু সে সব মিটিংয়ে এদের ভাগ্যে কী রয়েছে, তা কেউ জানে না। তবুও শিশু দিবস পালন হবে। শিশু দিবস পালনের জন্য সরকারি স্তরে নানান আধিকারিকদের মধ্যে ঠান্ডা ঘরে বসে নানান পরিকল্পনা নেওয়া হবে। খাওয়া-দাওয়া হবে। কিছুদিন বাদেই আবার আগের মতো সমস্ত পরিকল্পনা চাপা পড়ে যাবে। এক সময় শ্রম দপ্তরের পক্ষ থেকে ইটখোলার শিশুদের জন্য শিক্ষার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। আজ সে সব আর চোখে পড়ে না। আসুন, এই শিশু দিবস উদযাপনকালে আমরা সবাই মিলে ভাবি যে, ভারতের এক বড় অংশের শিশু তাদের স্বাস্থ্যের দিক থেকে, তাদের শিক্ষার দিক থেকে মোটেও সুরক্ষিত নয়। ওদের জন্য আমাদের, যারা একটু সুখী গৃহকোণে বাস করি, এখনই ভাবা দরকার।

[পাঠকের প্রতি বিশেষ অনুরোধ লেখাটি পড়ে অবশ্যই মূল্যবান মতামত কমেন্ট বক্সে দেবেন ।]
লেখক : বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়, সমাজ ও পরিবেশকর্মী,
চলভাষ- ৮৪২০৫২৯৯৬৬,
ই-মেল: biswajit.envlaw@gmail.com


Spread the love

Leave a Comment