
গ্রীষ্মকালীন শিক্ষাশিবির – এন আই এস সি (নৈহাটি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড কালচার)-এর উদ্যোগ। সহযোগিতায় একাধিক বন্ধু সংগঠন। প্রধান সহযোগী মামুদপুর ওয়েলফেয়ার সোসাইটি (পাটরা গ্রাম)।
বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য দু’সপ্তাহের এই শিবির শুরু হল বুধবার, ২১/০৫/২০২৫। মামুদপুর ওয়েলফেয়ার সোসাইটির ক্রীড়াঙ্গনে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ৩০ জন উৎসাহী ছাত্রছাত্রী নিয়ে চলছে শিবির।
হাতেকলমে বিজ্ঞানের প্রাথমিক পাঠ নিয়ে কর্মশালা হল বুধ ও বৃহস্পতিবার।
প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন এন আই এস সি-এর সক্রিয় সদস্য সন্তোষ সেন, বঙ্কিম দত্ত ও মন্টু দেবনাথ।
বিজ্ঞান শিক্ষার সামগ্রী ছিল :
বায়ুর চাপ ও জলের চাপের পরীক্ষা করার জন্য জলের বোতল, গ্লাস, একটু মোটা কাগজ, বেলুন, গামলা এবং বড় বোতলে ফিট করা পেপার রকেট।
কঠিন বস্তু কর্তৃক প্রযুক্ত চাপ ক্ষেত্রফল বাড়ার সাথে কমে যায়, এটা মনোগ্রাহী করে বোঝানোর জন্য আমাদের কাছে ছিল লম্বা স্কেল, চেয়ার, কাগজের কাপ, হৃষ্টপুষ্ট পড়ুয়া এবং চারপাশের বেশকিছু সহজ সরল উদাহরণ, এমনকি ভীষ্মের শরশয্যা ও সাধুবাবাদের কাঁটার বিছানায় শুয়ে থাকার গপ্পো।
আলোর প্রতিসরণ সহজে বোঝার জন্য স্টিলের বাটি, কয়েন ও জল। ভারকেন্দ্র ও বস্তুর ভারসাম্যের পরীক্ষা চিত্তাকর্ষক ভাবে দেখানো হল ১৪টি লোহার বড় পেরেক, ইরেজার, কাঁটা চামচ ও লম্বা স্কেল সহযোগে।
আর স্থিতিজাড্যের পরীক্ষা হল পরপর সাজানো প্রায় ১৫ খানা কয়েন, সেদ্ধ ডিম, প্লাস্টিকের ছোট কৌটো, গ্লাস ও কার্ড দিয়ে। এতে মাধ্যমিকের বিজ্ঞান বইয়ের আংশিক সত্য তথা ভুলকেও প্রমাণ করা হল অতি সহজেই।
শব্দের পরীক্ষার জন্য আমরা নিয়েছিলাম সুরশলাকা, চাবির রিং, বাটিতে জল, একটি গ্লাস ও পুরোনো মডেলের একটি ছোট ফোন।
জলের পৃষ্টটান খুব সহজেই হাতে কলমে করে দেখানো হল গ্লাস সহ জল, রঙের মোটা তুলি, ব্লেড ও ২২ খানা পিন দিয়ে।
সমস্ত বস্তুর ওপর একটি নির্দিষ্ট জায়গায় অভিকর্ষজ ত্বরণের মান সমান, এটা দেখানো হল আলাদা ভরের তিনখানা বল নিয়ে।
সূর্য দেখার জন্য জোগাড় করেছিলাম ১৪ নম্বর ওয়েল্ডিং গ্লাস আর সাদা আলোর বর্ণালী দেখার জন্য গ্রেটিং দিয়ে বানানো বিশেষ চশমা এবং বেলিজ বিডস।
দুইদিনের এই বিজ্ঞান কর্মশালায় আমরা প্রশিক্ষকরা খুশি ও আনন্দিত। ভালো লাগার কারণ, ছোট ছোট ছাত্র ছাত্রীদের দেখার, জানার ও নিজেদের হাতে করার অসীম আগ্রহ। তারা প্রয়োজনীয় তত্ত্ব বুঝে লিখে নিয়েছে, ভীষণ আনন্দ পেয়েছে, তাদের অভিজ্ঞতা লিখে জানিয়েছে, কিছু ছেলেমেয়ে বাড়ি গিয়ে কয়েকটা পরীক্ষা নিজেরাও করে দেখেছ। এই নিয়ে ওদের আবেগ আনন্দ আর ধরেনা।
পড়ুয়ারা সত্যিই জানতে, বুঝতে ও শিখতে চায়। আমরা পারিনা সময় ও লোকবলের অভাবে। এর সাথে অবশ্যই যুক্ত আছে আমাদের পরীক্ষা নির্ভর অবৈজ্ঞানিক পাঠক্রম এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জীবনযাত্রার সাথে সম্পৃক্ত করে পাঠদান না করা বা করতে না পারার বিষয়টি। আর অতি অবশ্যই ইঁদুর দৌড়ে ওদেরকে দৌড় করিয়ে নিয়ে যাওয়ার বড়দের বাসনা।
কোন শিক্ষক শিক্ষিকা তাঁর স্কুলে এই ধরনের বিজ্ঞান কর্মশালার আয়োজন করতে চাইলে আমরা একটা দিন অন্ততঃ ৫-৬ ঘণ্টার ওয়ার্কশপ করতে আপ্রাণ চেষ্টা করবো। সাথে যুক্ত হতে পারে আরও কিছু নতুন পরীক্ষা নিরীক্ষা।
মামুদপুরের গ্রীষ্মকালীন শিবিরের বাকি দিনগুলোয় থাকবে কাগজ ও মাটি দিয়ে বিভিন্ন মডেল বানানোর প্রশিক্ষণ। ছবি আঁকা শেখার ওয়ার্কশপ করবেন আমাদের বন্ধু চিত্রশিল্পীরা। থাকবে আশেপাশের প্রকৃতি পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে প্রকৃতির অপার গুরুত্ব বা অবদান বোঝা ও অনুভবে আনা। আমাদের অন্যান্য প্রশিক্ষকরা ভূগোল ও ইতিহাস পড়াবেন জীবনযাত্রা ও যাপনের সাথে সম্পৃক্ত করে। সহজে অংক কষার কায়দাও শেখানো হবে।
আর অতি অবশ্যই করে সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রকৃতি পরিবেশের ওপর ছোট পড়ুয়াদের উপযুক্ত কুইজ। এবং প্রাণ প্রকৃতি পরিবেশ কেন্দ্রিক একটি নাটকের ওয়ার্কশপ ও মঞ্চায়ন হবে। নাটক করার কথা শুনে ওরা তো এখন থেকেই লাফাচ্ছে। সাব্বাস।
ছবি, ভিডিও তোলার জন্য আলাদা করে বিশেষ কেউ ছিলেন না বলে ভালো ছবি নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবু কয়েকটি মুহূর্ত ভাগ করে নিচ্ছি বন্ধুদের সাথে।
নিজস্ব প্রতিবেদন ।
[পাঠকের প্রতি বিশেষ অনুরোধ লেখাটি পড়ে অবশ্যই মূল্যবান মতামত কমেন্ট বক্সে দেবেন ।]