
বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের আলোকে বিশ্ব কচ্ছপ দিবস
“বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে“- সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পালামৌ ভ্রমণ কালে তার করা এই উক্তিটি আজ অত্যন্ত বাস্তব এবং প্রাসঙ্গিক। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বন্যপ্রাণের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। দুটোই একে অপরের পরিপূরক। কিন্তু বর্তমানে বন্যপ্রাণীরা কতটা সুরক্ষিত!!! প্রসঙ্গত বিগত ২০০০ সাল থেকে ‘বিশ্ব কচ্ছপ দিবস‘ পালিত হয়ে আসছে। মূলত আমেরিকান টরটয়জ রেসকিউ (ATR) সংগঠনটির হাত ধরে প্রতিবছর ২৩ শে মে সংকটাপন্ন এই প্রজাতিটির সংরক্ষণের জন্য সচেতনতামূলক একটি দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হয়ে থাকে।’
International Union for the Conservation of Nature ‘(IUCN) প্রদত্ত রেড ডাটা লিস্টের তালিকায় সংকটাপন্ন এবং অতি বিপদাপন্ন বন্যপ্রাণের তালিকায় কচ্ছপ রয়েছে। তবে কচ্ছপের অসংখ্য প্রজাতি রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে কিছু সমুদ্রে এবং কিছু মিষ্টি জলে বসবাস করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ আমাদের দেশের বিপদাপন্ন কচ্ছপের তালিকায় বেঙ্গল রুফ বড় কচ্ছপ, অসম রুফ বৃহৎ কচ্ছপ এবং দেশের সংলগ্ন মহাসাগর ও সাগরগুলোতে কিছু বৃহৎ আকৃতির কচ্ছপ এই তালিকায় রয়েছে। কচ্ছপ সাধারণত জল ও স্থলে বসবাস করে। একটি পূর্ণবয়স্ক কচ্ছপ ৩০০ বছর অবধি বেঁচে থাকতে পারে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের আইন কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এখনো গ্রামাঞ্চলে প্রত্যন্ত জায়গায় বা অপেক্ষাকৃত নিভৃত স্থানে কচ্ছপের মাংস, খোলস ইত্যাদির কেনা বেচা হয়ে থাকে। তথাপি স্থলজ ও জলজ বাস্তুতন্ত্র রক্ষার ক্ষেত্রে এই প্রাণীটির যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।
কচ্ছপের বর্তমান হাল হকিকত নিয়েই কথা হচ্ছিল উত্তরবঙ্গের বিশিষ্ট বন্যপ্রাণবিদ, প্রাক্তন বনাধিকারিক তথা কালিংপং কলেজের প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপক ড: রাজা রাউতের সাথে।তিনি এই ব্যাপারে জানালেন, ” IUCN এর রেড ডাটা লিস্ট অনুযায়ী লেদার ব্যাক, হকসবিল, কেম্পস রিডলে, অলিভ রিডলে ইত্যাদি প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপ এবং বাটাগুর বাসকা এই প্রজাতির মিষ্টি জলের কচ্ছপ ক্রিটিকালি এনডেঞ্জার্ড অবস্থায় রয়েছে। পাশাপাশি, আইনসম্মতভাবে বর্তমানে কচ্ছপ শিকার অনেকটাই আটকানো গেছে, তবে পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এখনো সচেতনতার অভাবে গ্রামে-গঞ্জে চোরাগুপ্তা পথে কচ্ছপ অনেক বেশি দামে বিক্রি হয়, পাচারও হয়। কচ্ছপ শিকার মোটামুটি ৬০ শতাংশ ভাবে কমানো গেছে বর্তমানে। অন্যদিকে চিড়িয়াখানা, পার্ক গুলোতে অনেক সময় সরকারি আইন মেনে এক্স সিটু সংরক্ষণের আওতায় কচ্ছপ প্রতিপালন করা হয়ে থাকে। এছাড়া আর একটা বিষয় এক্ষেত্রে লক্ষনীয় যে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে কচ্ছপ প্রতিপালনের একটা রেওয়াজ আছে, সেটাও এক ধরনের সংরক্ষণ। এটি এক্স সিটু সংরক্ষণের অধীন স্যাক্রেট প্রিজারভেশন বা পবিত্র প্রাণী সংরক্ষণের মধ্যে পড়ে। এটিও নিয়ম মেনেই করা হয়ে থাকে”।
তবে যাই হোক, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কচ্ছপ নামক এই প্রাণীকে চাক্ষুষ না দেখে শুধুমাত্র বইয়ের পাতায় যাতে না দেখতে, পড়তে ও জানতে হয়, সেজন্য এখন থেকেই অন্যান্য প্রাণীর সাথে সাথে এই ক্ষুদ্র অথচ অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রাণীটির উপযুক্ত বাস্তুসংস্থানগত সংরক্ষণ অতিপ্রয়োজনীয়।
লেখক : সজল মজুমদার, শিক্ষক , ভূগোল বিভাগ, বালাপুর উচ্চ বিদ্যালয় (উ:মা:) তপন, দক্ষিণ দিনাজপুর
Email – majumdersajalgeography@gmail.com
[পাঠকের প্রতি বিশেষ অনুরোধ লেখাটি পড়ে অবশ্যই মূল্যবান মতামত কমেন্ট বক্সে দেবেন ।]