
‘ওষুধ প্রয়োজনীয় – অপ্রয়োজনীয়‘ আবার প্রকাশিত হলো
দীর্ঘ পঁচিশ বছর পর আবার প্রকাশিত হোল বইটির নতুন সংস্করণ। ২৮ জুলাই ২০২৪ কে আমরা প্রকাশকাল ধরে এগিয়েছিলাম, কিন্তু কমবেশী দশ মাস দেরী হোল। প্রথম প্রকাশিত হয়েছিলো ১৯৯৫ সালে দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি সহর থেকে।
এই সময়কালের মধ্যে দেশের চিকিৎসা পরিষেবা বাজারের যে অগ্রগতি ঘটেছে তা বাজারী ব্যবস্থার গতির অভিমুখে। চিকিৎসা আইনী ভাবে ‘পণ্য’ হয়েছে(১৯৮৬।১৯৯৬)। চিকিৎসা পরিষেবাতেও ‘প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি’ বিকশিত ও প্রসারিত হয়েছে।
অর্থাৎ চিকিৎসা বাজারের দরাদরি, অনৈতিকতা, অনাচার, দুর্নীতি, প্রতারণা ইত্যাদি সব বাজারী গতি অভিমুখে প্রসারিত হয়েছে। আধুনিক চিকিৎসা ও ওষুধ নিয়ে চিকিৎসা প্রার্থীর বিশ্বাস, নৈতিকতা, বৈজ্ঞানিক ভাবনা সব তলানিতে পৌঁছেছে।
জনগণের মধ্যে আধুনিক ওষুধ বিজ্ঞানের কাজচলা শিক্ষামালা পৌঁছে দিতে হবে — পঁচিশ বছর আগে এই ছিলো আমাদের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। পঁচিশ বছর ধরে আমরা কাজে সক্রিয় থেকেছি। আমাদের কাজকে চলমান রেখেছি। জনগণ সাদরে আমাদের কাজকে গ্রহণ করেছেন। আমাদের অনেক কিছু মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন।
এই কাজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, রূরাল মেডিকেল প্র্যাকটিশনার্স এসোসিয়েশনের (আরএমপিএ।১৯৮৫) কর্মীবাহিনী। হাজারো সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে, মেডিকেল কলেজের দরজায় পা না রেখেও, অনেকে বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিপূর্ণ চিকিৎসার পথে হাঁটতে শুরু করেছেন বা হাঁটছেন।
‘আমরা আধুনিক ওষুধ বিজ্ঞানের কাজচলা শিক্ষামালায় সজ্জিত হতে পারি’ — জনগণের একাংশ আমাদের পুরানো ভাবনার রূপান্তর ঘটিয়ে, আমাদের আরো দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
কিন্তু আজও আমরা ফোনে ফোনে বিনামূল্যের চিকিৎসা সাহায্য দিতে গিয়ে শুনতে পাই, ‘আমি তো ইঞ্জিনিয়ার, আমি ব্যাংকে কাজ করি, আমি স্কুলে পড়াই, আমি গানের শিল্পী, আমি মানবাধিকার কর্মী, আমি বিজ্ঞানকর্মী ইত্যাদি — আমি মেডিকেল কলেজে পড়িনি, ওগুলো ডাক্তারদের জানার বিষয়। এখনো চিকিৎসা পরিষেবা বাজারী হওয়া সত্বেও, পরিষেবা পণ্য কেনার সময়, মানুষ যাচাই করেন না এবং রোগীরা চিকিৎসকদের নিঃশর্ত বিশ্বাস করেন।
জনগণের বেশীর ভাগ অংশ, ওষুধ পণ্য কেনায় যাচাই করেন না। যাচাই করা বা বিচার করার কাজচলা মানদণ্ড গড়ে তোলেননি বা গড়ার চেষ্টা করেননি।
যুগ যুগ ধরে শাসকশ্রেণীর বেঁধে দেওয়া নিয়ম-শৃঙ্খলে নিজেদেরকে বেঁধে রাখেন বা রাখতে ভালো বাসেন। নিজেদের ‘মানসিক অলসতা’ ও ‘চিন্তাশক্তির অক্ষমতা’কে মূল্যবান মনে করে আঁকড়ে থাকেন।
‘জেনেরিক নামে ওষুধ লিখতে হবে‘ সুপ্রীম কোর্টের রায়ের অন্তরালে
1# খবরে প্রকাশ, The Supreme Court on Thursday stated that doctors nationwide should be required to prescribe only generic medicines instead of branded ones. The top court was hearing a Public Interest Litigation (PIL) seeking the stringent regulation of the marketing and promotion of drugs by pharmaceutical firms.
This observation came during the hearing of a petition filed by the Federation of Medical & Sales Representatives Associations of India (FMSRAI) and others. The plea emphasised that large sums of money are spent on sales and promotional activities aimed at influencing doctors to increase prescription volumes.
A three-judge Bench, headed by Justice Vikram Nath and including Justices Sanjay Karol and Sandeep Mehta, remarked, “We believe that doctors should be mandated to prescribe only generic medicines. That will align with the relief you are seeking. In Rajasthan, an executive instruction already requires all medical professionals to prescribe only generic drugs.”(Business Standard। 2 May 2025) (সংক্ষেপে, সুপ্রীম কোর্ট ডাক্তারদের বলেছে বা নির্দেশ দিয়েছে যে, সবাইকে প্রেসক্রিপশনে জেনেরিক নামে ওষুধ লিখতে হবে। কারণ এতে ডাক্তারদের কোম্পানি প্রীতি-ঘুষ খাওয়া বন্ধ হবে। অবৈজ্ঞানিক ভাবে বাণিজ্যিক নামে ওষুধ লেখা বন্ধ হবে। ভালোবেসে, রোগী ঠকানো বন্ধ হবে। ওষুধ বাজারের অনাচার বন্ধ হবে। ইত্যাদি)।
সুপ্রীম কোর্টের এই রায়কে অনেকে স্বাগত জানিয়েছেন ও উছ্বাস প্রকাশ করেছেন। এই রায় বা বক্তব্য কী জনস্বার্থে ? রোগীদের স্বার্থে ? চিকিৎসা বিজ্ঞানের স্বার্থে? আদৌ নয়। শাসকশ্রেণী ও ওষুধ কোম্পানির স্বার্থে এই ধরনের পদক্ষেপ।
2# একটা খুব সহজ কাজ তো দেশের উচ্চআদালত করতে পারতো। সেটা হচ্ছে, কোন ওষুধ কোম্পানি আদৌ বাণিজ্যিক নামে ওষুধ উৎপাদন করতে পারবে না এবং সব ওষুধ কোম্পানীকে জেনেরিক নামে ওষুধ উৎপাদন করতে হবে।
আচ্ছা, এই সহজ উপায় কী সুপ্রীমকোর্ট জানে না ? আমাদের চেয়েও ভালো জানে। তাহলে কেন ওষুধ কোম্পানি ও সরকারকে এই নির্দেশ দেওয়া হলো না ? এর পেছনে ইলেক্টরেল বন্ডের(Eectoral Bond) কাহিনী থাকতে পারেl আরো কিছু ! সেটাই আমাদের আলোচনার বিষয়।
3# যে কোন চিকিৎসক তাঁর প্রেসক্রিপশনে রোগীদের জন্য জেনেরিক নামে ওষুধ লিখবেন, এটাই বিজ্ঞানসম্মত ও যুক্তিপূর্ণ। এটাই রোগী দরদী কাজ। এ সবই এমবিবিএস এ পড়ানো হয়।
কিন্তু বেশিরভাগ চিকিৎসক বিভিন্ন কারণে বাণিজ্যিক নামে(Commercial Name) ওষুধ ফর্মূলেশন লিখতেন। এখনো লেখেন ।
4# জনগণের মধ্যে অনেকেই জানেন যে, মেডিকেল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া, ২০০২ সালে (তেইশ বছর আগে), চিকিৎসকদের ওষুধ ফর্মূলেশন লেখা প্রসঙ্গে, যে নীতিমালা প্রনয়ণ করেন, তাতে বলা হয়েছে —
“Use of Generic names of drugs: Every physician should, as far as possible, prescribe drugs with generic names and he / she shall ensure that there is a rational prescription and use of drugs.”
সূত্র : MCI notification of April 6, 2002, the Indian Medical Council (Professional Conduct, Etiquette and Ethics, Regulation, 2002).
এর ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০০৫ সালে (বামফ্রন্ট সরকার) এবং ২০১২ সালে (তৃণমূল কংগ্রেস সরকার) লোকদেখানো বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলো।
কিন্তু বেশির ভাগ চিকিৎসক অনৈতিক ভাবে তা কখনোই মেনে চলেননি। তার কারণ অন্যত্র ও বহু রকমের।
5# বর্তমান রায়ে দেশের সুপ্রিমকোর্ট জনগণের জন্য একটা বিষয় প্রমাণ করে দিয়েছে যে, বিগত বাইশ বছর ধরে চিকিৎসকরা ওষুধ লেখার ক্ষেত্রে, রোগীদের প্রতি অনৈতিক আচরণ করেছেন। করে চলেছেন। কোন সরকার জেনেরিক নামে ওষুধ লেখা প্রসঙ্গে চিকিৎসকদের বাধ্য করেনি বা করার চেষ্টা করেনি। এটাও সুপ্রীম কোর্ট প্রমাণ করেছে।
সোসাইটি ফর সোসাল ফার্মাকোলজি’র বিভিন্ন কাজে প্রমাণিত হয়েছে যে, ৯০% চিকিৎসক তাঁদের প্রেসক্রিপশনে কোন না কোন অনাচারের নিদর্শন রেখেছেন। এর দায় কেবল চিকিৎসকদের নয়। যে আর্থসামাজিক চলনের মধ্য দিয়ে ‘চিকিৎসা পণ্যের বাজার’ চলমান, যে ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চিকিৎসকদের চিকিৎসা পণ্য( ক্রেতা সুরক্ষা আইন-১৯৮৬) বিক্রী করতে হয় সেখানে অনাচার অনিবার্য।
সমাজের উৎপাদন, বিনিময় ও আর্থসামাজিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে আমাদের অনুসন্ধান করতে হবে সুপ্রীম কোর্টের এই রায় ও চিকিৎসকদের অনৈতিকতা।
——————————————————
স্বপন জানা। ৪ মে ২০২৫। কলকাতা।
সৌজন্য : সোসাইটি ফর সোসাল ফার্মাকোলজি।
*
‘ওষুধ প্রয়োজনীয় – অপ্রয়োজনীয়’ বইটির বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য সমূহ—
# সাইজ : ২৩×১৮সেমি(মোটামুটি)
# পাতা : ১০০ পাতার কাছাকাছি।
# ওজন : ১৫৫ গ্রাম।
# সাহায্য মূল্য : তিরিশ টাকা।
#ফোন করতে পারবেন : 98308 29020.
বইটি নিয়ে আপনাদের গণপ্রচারকে সোসাইটি ফর সোসাল ফার্মাকোলজি’র কর্মীবাহিনী স্বাগত জানায়।
স্বপন জানা। ১৯ মে ২০২৫ । কলকাতা।
সৌজন্য : সোসাইটি ফর সোসাল ফার্মাকোলজি।
[পাঠকের প্রতি বিশেষ অনুরোধ লেখাটি পড়ে অবশ্যই মূল্যবান মতামত কমেন্ট বক্সে দেবেন ।]