
জন্মিলে মরিতে হবে রে জানে তো সবাই
তবু মরণে মরণে অনেক
ফারাক আছে ভাই রে, সব মরণ নয় সমান।।
রক্তচোষার উস্কানিতে, জনতার দুশমনিতে,
সারা জনম গেলে কেটে মরণ যদি আসে
ওরে সেই মরণের ভার দেখে ভাই,
পাখীর পালক হাসে রে, সব মরণ নয় সমান।।
জীবন উৎসর্গ করে সবহারা জনতার তরে
মরণ যদি হয়,
ওরে তাহার ভারে হার মানে ঐ
পাহাড় হিমালয় রে, সব মরণ নয় সমান।।
বন্ধুরা, আসুন পরিচিত হই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং জীবনের শিক্ষার চুড়ান্ত নিদর্শক – অধ্যাপক গুরুদাস আগরওয়ালের সঙ্গে। এতো স্বল্প পরিসরে ওনাকে নিয়ে বলা সত্যিই অসম্ভব; শুধু জেনে রাখা যেতে পারে অধ্যাপক আগরওয়াল ছিলেন আইআইটি রুরকির সিভিল ইঞ্জিনীয়ার এবং বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জীনিয়ারিংয়ের ডক্টরেট। আইআইটি কানপুরের শিক্ষক ও বিভাগীয় প্রধান এবং সেন্ট্রাল পল্যুশন কন্ট্রোল বোর্ডের প্রথম সদস্য-সচিব, গঙ্গা নদী নিয়ে তৈরী হওয়া অনেক সরকারী কমিটির সদস্য ও প্রধান।
পরবর্তীতে ২০১১ সালে তিনি ‘সন্ন্যাস’ গ্রহণ করেন এবং স্বামী জ্ঞানস্বরূপ সানন্দ নামে পরিচিত হয়ে গঙ্গা নদীর উপর নির্ভরশীল প্রায় ৫০% ভারতবাসীর জন্য জীবনদায়িনী, প্রাকৃতিক ও পবিত্র মা গঙ্গা নদীর জন্য, ‘অবিরল ও নির্মল’ গঙ্গার জন্য, গঙ্গার গঙ্গত্বের জন্য, গঙ্গা ভক্ত পরিষদ তৈরী করার জন্য এবং গঙ্গা নদীকে রক্ষা করা নিয়ে আইন প্রণয়নের জন্য তিনি সারা জীবন ধরে চেষ্টা করে গেছেন। ২০০৮ সালের জুন মাস থেকে তিনি বারবার গঙ্গার অবিরলতা নিয়ে অনশন করেছেন; এবং তাঁর অনশনের জন্যই তত্কালীন কেন্দ্রীয় সরকার প্রথমে ভাগীরথী নদীর উপর তৈরী হতে চলা ভৈরো ঘাঁটি, পালা-মানেরী ও লোহারি নাগ-পালা জলবিদ্যুত প্রকল্প বন্ধ করে দেন। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে স্বামী সানন্দজী, প্রধানমন্ত্রী মাননীয় শ্রী নরেন্দ্র মোদী মহাশয়কে খোলা চিঠি লেখেন অলকানন্দা নদীর উপর হতে থাকা বিষ্ণুগাড-পিপলকোটি এবং মন্দাকিনী নদীর উপর হতে থাকা ফাটা-বুয়াং এবং সিংগলি-ভাটোয়ারি নিয়ে সমস্ত রকম নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য, গঙ্গা ভক্ত পরিষদ তৈরী করার জন্য এবং গঙ্গা নদীকে রক্ষা করা নিয়ে আইন প্রণয়নের জন্য। এরপরেও তিনি চিঠি দিয়ে গেছেন কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কোনো উত্তর না পাওয়ায় হরিদ্বারের কংখলের মাতৃসদন আশ্রমে (যে আশ্রম থেকে গত ২৬ বছরে “অবিরল ও নির্মল গঙ্গার” জন্য, পাথর খাদান বন্ধ করার জন্য, গঙ্গার গঙ্গত্ব রক্ষার জন্য, ৬৭ বার অনশন হয়েছে এবং ৪ জন সন্ন্যাসীর প্রাণ গেছে) ২০১৮ সালের ২২এ জুন থেকে তিনি আমরণ অনশন শুরু করেন। ২০১৮ সালের ৯ই অক্টোবর থেকে তিনি জলগ্রহন করা বন্ধ করে দেন এবং হাসপাতাল থেকেই আবারো প্রধানমন্ত্রী মাননীয় শ্রী নরেন্দ্র মোদী মহাশয়কে খোলা চিঠি লেখেন কিন্তু প্রতিবারের মতন এবারো কোনো উত্তর আসেনা; অবশেষে ২০১৮ সালের ১১ই অক্টোবর অনশনের ১১২তম দিনে গঙ্গা নদীর জন্য, মানুষের জন্য নিবেদিত এই মহান প্রাণ মারা যান। যা স্বামী নিগামানন্দ সরস্বতীজীর মতোই আরেকটি রহস্য মৃত্যু বলেই মানুষ মনে করে। আসুন আমরা ওনাকে স্মরণ করি আর চেষ্টা করি প্রকৃতি-পরিবেশের জন্য যে যেমন ভাবে পারি অল্প কিছু করার।
নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও আন্দোলন
পরিবেশ বান্ধব মঞ্চ বারাকপুর
‐—————————————————————-
লেখক : কল্লোল রায়
মোবাইল :9331035550
পরিচিতি : পরিবেশ কর্মী , নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও