
পথ চিনে যাই
অঙ্কিতা সেনগুপ্ত
চারিদিকে শুধুই অথৈ জলরাশি । দূর দুরান্ত পর্যন্ত নেই জমির সামান্য চিহ্ন। তবুও তারই মাঝে চলেছে এক বিশাল জাহাজ । নিচে তার সুদূর বিস্তৃত সমুদ্র, উপরে অসীম আকাশ। বলছি সেই সময়ের কথা যখন জিপিএস কথাটির কোনো অস্তিত্ব ছিল না। হাতের মোবাইল থেকে ম্যাপ দেখে নেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
কিন্তু এই সামান্য কারণে মানুষকে যে আটকে রাখা যায়নি তার সাক্ষ্য তো ইতিহাসই দেয়। জিপিএস না হয় ছিল না, কিন্তু আকাশ তো তখনও ছিল আর ছিল তাকে পড়ার ভাষা, ছিল গণিত।
সেই গণিতকে বুঝতে হলে বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের শরণাপন্ন হলেই হবে। মনে করতে হবে আমাদের সুপরিচিত ‘ত্রিকোণমিতি’-কে। ষোড়শ শতকে ইউরোপে ত্রিকোণমিতির হিসাবকে কাজে লাগিয়ে দিগন্তের সাপেক্ষে আকাশের তারার উন্নতি কোণ নির্ণয় করার জন্য একটি জনপ্রিয় যন্ত্র ছিল ‘Cross-Staff’ বা ‘Jacob’s Staff’।
খুব সাধারণভাবে বলতে গেলে এটিকে একটি লম্বা দন্ড বলা যায়। এর সাথে লম্বভাবে যুক্ত থাকতো ক্রস-পিস যাকে কিনা ঐ দন্ড বরাবর সরানো সম্ভব।
যদি দিগন্তের সাপেক্ষে কোনো তারার উন্নতি কোণ মাপতে হয় তবে দন্ডটিকে চোখের কাছে ধরতে হবে।
ক্রস – পিসটিকে এমনভাবে রাখতে হবে যে তার একপ্রান্তে তারা ও অন্যপ্রান্তে দিগন্ত। তারপর গণিতের সহজ হিসাব অনুযায়ী কোনের মান নির্ণয় করতে হবে। এক্ষেত্রে স্কেল লম্বা দন্ডটির উপরে দেওয়া থাকতো।
সঙ্গের চিত্রটি দেখলে সহজেই বোঝা যায় যে,
tanA = BC/TC
কোণের মাপ তো পাওয়া গেল, কিন্তু তাতে লাভ কি ?
একটা উদাহরণ দেওয়া যাক,
যদি কোনো ব্যক্তি তাঁর যন্ত্রটির দ্বারা দেখেন যে আকাশের ধ্রুবতারা দিগন্তের সাথে 60° কোণ করে অবস্থান করছে, তাহলে তাঁর অবস্থান হল 60° উত্তর অক্ষাংশে ।
হাতের একটি যন্ত্র ও আকাশের তারা এইভাবেই দেয় সন্ধান দেয় অবস্থানের। অবস্থান জানলে তবেই তো মিলবে পথের হদিস। এইভাবেই শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আকাশের তারায় মানুষ পেয়েছে পৃথিবীর বুকে তাঁর অবস্থানের আভাস, পেয়েছে পথের ঠিকানা।
লেখিকা : অঙ্কিতা সেনগুপ্ত, গণিতের শিক্ষিকা ।
দুরাভাষ : 9748685280