Posted on: July 9, 2024 Posted by: Editor Desk Comments: 0
Spread the love

স্কুল জীবন থেকেই হামফ্রে ডেভির সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটে সেফ্টি ল্যাম্প বা নিরাপত্তা বাতির মধ্য দিয়ে । এমন একটা সময় যখন ল্যাভয়সিয়ের হাত ধরে আধুনিক রসায়নের জন্ম হতে চলেছে । সেই সময় (১৭৭৮, ১৭ই ডিসেম্বর) জন্ম গ্রহন করেন ব্রিটিশ রসায়নবিদ হামফ্রে ডেভি । ডেভি দীর্ঘ সময় চর্চা করেছেন ভোলট্যাইক ব্যাটারি এবং তড়িৎ বিশ্লেষণের উপর । তড়িৎ বিশ্লেষণের সাহায্যে আবিষ্কার করেছেন সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, বেরিয়াম, বোরন ও হ্যালোজেন সহ বেশ কিছু মৌল । অবসর গ্রহনের পর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তিনি ভ্রমনে যান । নজরে আসে কয়লা খনিতে কর্মরত শ্রমিকদের বিভিন্ন দুর্ঘটনার খবর । কয়লা খনিতে মিথেন ও অন্যান্য দায্য গ্যাসের উপস্থিতির কারণে সাধারণ বাতি সেখানে ব্যবহারে প্রায়শই দুর্ঘটনার কবলে পরতো শ্রমিকেরা ।

একদিকে বিজ্ঞানী অন্যদিকে কবি ডেভির মন বিচলিত হয়ে উঠে । লেগে পরলেন সেফ্টি ল্যাম্প আবিষ্কারের কাজে । ১৮১৫ সালে কোলিয়ারি শ্রমিকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ডেভি এক বিশেষ বাতির আবিষ্কার করেছিলেন । কয়লা খনির ভিতরে থাকে দায্য কোল গ্যাসে যাতে বাতি থেকে আগুন ধরে বিস্ফোরণ না ঘটে তার জন্যই এই বিশেষ ব্যবস্থা । বাতিকে ঘিরে আছে এক তারজালি যার মধ্যদিয়ে আগুনের শিখা বাইরে আসতে পারেনা । তারজালি উত্তপ্ত হচ্ছে কিন্তু তার জ্বলন বিন্দুতে পৌছাতে পারছে না । অন্যদিকে তারজালির উপর কোল গ্যাস অক্সিজেনের সংযোগে শিখাহীনভাবে জ্বলছে । এ যেন এক নিয়ন্ত্রিত রাসায়নিক ক্রিয়া । আবার বাতি নিভে গেলে বুঝতে হবে অক্সিজেনের প্রভাব কমে গেছে । শ্রমিকেরা কিছুটা সময় পাবে সেখান থেকে বেড়িয়ে আসতে । ১৮১৬ সালের ৯ জানুয়ারী হেববার্ন কোলিয়ারিতে তারের চালনী দিয়ে ডেভি ল্যাম্পের প্রথম ট্রায়াল হয়েছিল । তার এই আবিষ্কারের জন্য ডেভিকে রামফোরড মেডেল প্রদান করা হয়েছিল । ডেভি ল্যাম্পের তারজালি বানাতে অনেক কপার, সিলভার, সোনা, প্ল্যাটিনাম, প্যালাডিয়ামের মতো অনেক ধাতুকেই বেছে নিয়েছেলিন কিন্তু সুফল পেয়েছেন শুধুমাত্র প্ল্যাটিনাম ও প্যালাডিয়ামের ক্ষেত্রে । ডেভি ল্যাম্পের আবিষ্কারের পাশাপাশি দিয়ে গেছেন আরেকটি নতুন ধারনা । এখানে একটি ধাতুর পৃষ্ঠতলের উপর দুটি গ্যাসের রাসায়নিক সংযোগ ঘটেছে । কিন্তু ধাতু রাসায়নিক রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ নেয়নি অর্থাৎ বিক্রিয়া শেষে ধাতু নিজে অপরিবর্তিত । এটিকে অনুঘটনের প্রথম পরীক্ষা মূলক প্রমাণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায় । অন্যদিকে অনুঘটক একটি নির্দিষ্ট বিক্রিয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট, একথা নিঃসন্দেহে প্রমাণ করা এই পরীক্ষা । এ যেন একটি খেলার মাঠ । একদল ফুটবল নিয়ে মাঠে নেমেছে, সেই অর্থে প্রতিপক্ষ নেই । তবুও গোল করতে আসছে অনেক বাধা । সেই বাধা অতিক্রম করে একা গোল করা প্রায় অসম্ভব । তাই নিজের সর্বোচ্চ দক্ষতা দেখিয়ে বল পাস দিচ্ছে আরেকজনের হাতে । অনুঘটক আবিষ্কারের ধারাবাহিক ইতিহাস চর্চায় সেই রকম রেখাচিত্রই ফুটে উঠে ।

 


[পাঠকের প্রতি বিশেষ অনুরোধ লেখাটি পড়ে অবশ্যই মূল্যবান মতামত কমেন্ট বক্সে দেবেন ।]

লেখক ড.তপন দাস , প্রধান শিক্ষক ও বিজ্ঞান লেখক


Spread the love

Leave a Comment