
বন্ধুরা, আসুন পরিচিত হই এক অসাধারণ ব্যক্তিত্বের সঙ্গে – স্বামী নিগামানন্দ সরস্বতী। ১৯৯৮ সালের জানুয়ারী ও জুন মাসে গঙ্গাবক্ষে অবৈধ খনন বন্ধ করার জন্য ৭০ দিন ধরে অনশন করেন, ২০১১ সালের ১৯এ ফেব্রুয়ারী থেকে স্বামী নিগামানন্দজী আবারো অবৈধ খননের বিরুদ্ধে অনশন শুরু করেন এবং ৬৮তম দিনে শারীরিক অবস্থার জন্য তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে সেখানে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগ করা হয়, ফলশ্রুতিতে ২০১১ সালের ১৩ই জুন, ১১৫তম দিনে স্বামী নিগামানন্দ সরস্বতী রহস্যজনক ভাবে মারা যান। মামলা হয়, ভারতের ইতিহাসে প্রথম আদালতের নির্দেশে একজন সন্ন্যাসীর দেহ, সমাধি থেকে তুলে দ্বিতীয়বার ময়না তদন্ত হয় এইকথা জানতে যে সত্যিই বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল কিনা; সিবিআই তদন্ত হলেও তার রিপোর্ট এখনো জানা যায়নি। সাধারণ মানুষের কাছে এটি হত্যা ছাড়া আর কিছুই নয়।
১৯৯৭ – ১৯৯৮ সালে হরিদ্বারের কংখলের জগজীতপুর গ্রামে গঙ্গা নদীর পাড়ে মাতৃসদন আশ্রম প্রতিষ্ঠার পর, কুম্ভক্ষেত্রে পাথর ভাঙার খাদান ও অবৈধ খনন বন্ধ করা এবং গঙ্গা নদী দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করার দাবীতে আশ্রম প্রধান গুরুজী শিবানন্দ সরস্বতীর অনুমতি নিয়ে ১৯৯৮ সালের মার্চ মাস থেকে স্বামী গোকুলানন্দ সরস্বতী এবং গঙ্গাপুত্র স্বামী নিগামানন্দ সরস্বতীর প্রথম অনশন শুরু করেন। এরপর এই মাতৃসদন আশ্রম থেকে আজ পর্যন্ত গঙ্গার অবিরলতা ও নির্মলতা নিয়ে, কুম্ভক্ষেত্রে পাথর খাদান ও অবৈধ খনন বন্ধ করা নিয়ে, উত্স মুখ থেকে ১২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত সমস্ত রকম বাঁধ, জলবিদ্যুত্ প্রকল্প বন্ধ করার দাবীতে, গঙ্গা ভক্ত পরিষদ তৈরী করার জন্য এবং গঙ্গা নদীকে রক্ষা করা নিয়ে আইন প্রণয়নের দাবীতে ৬৭ বার অনশন করা হয়েছে। ভাবা যায়, গঙ্গা নদীকে, পর্বতকে, কুম্ভক্ষেত্রকে তাদের প্রাকৃতিক রূপে বজায় রাখার জন্য একটি আশ্রমের সন্ন্যাসীরা ধারাবাহিক ভাবে ২৭ বছর ধরে অনশন, সত্যাগ্রহ চালিয়ে যাচ্ছেন।
মাতৃসদন আশ্রম, অবিরল ও দূষণ মুক্ত গঙ্গা নদীর জন্য, পরিবেশ-প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য ও গঙ্গার প্রাকৃতিক রূপ বজায় রাখার জন্য, মানুষের তৈরী সভ্যতার বিপদ কমানোর জন্য, আমাদের সকলের জন্য তাঁদের ত্যাগ, তপস্যা, অনশন আন্দোলন বজায় রেখে চলেছেন। “গঙ্গাকে অবিরল বইতে দাও” আসুন আমরা সবাই দেশের সব জায়গায় এই স্লোগান ছড়িয়ে দেই। কারণ ছোট-বড় শাখা নদী, উপনদী, খালগুলি না জীবিত থাকলে দেশের জীবন-রেখা, প্রাণ-প্রবাহিনী গঙ্গা নদীর জীবিত অস্তিত্বও বজায় থাকবে না। বন্ধুরা, আসুন, যোগ দিন, আওয়াজ তুলুন গঙ্গা নদীকে তাঁর প্রাকৃতিক রূপে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। আমাদের লক্ষ্য হওয়া দরকার মাতৃসদন আশ্রমের এই সংকল্প এবং অসাধারণ লড়াইয়ের কথা দেশের সর্বত্র সমস্ত মাধ্যমে সবরকম ভাবে প্রচারের চেষ্টা করা।
[পাঠকের প্রতি বিশেষ অনুরোধ লেখাটি পড়ে আপনার মূল্যবান মতামত অবশ্যই কমেন্ট বক্সে দেবেন ।]
নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও আন্দোলন
পরিবেশ বান্ধব মঞ্চ বারাকপুর
কল্লোল রায়, মো. 9331035550