
অপরিচিত একটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস-
আগামী ৫ ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস এবং তার আগে ৩ রা জুন বিশ্ব সাইকেল দিবস যেন একটি সাজানো-গোছানো পূর্ব পরিকল্পিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস পালন। দিবস দুটি শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয়, এই দিন দুটি একে অপরের সাথে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। সাইকেল দিবসে সাইকেল চালাব, সাইকেলের গুনগান করব, সাথে পরিবেশ সুস্থ রাখার বার্তা দেব ; আবার পরিবেশ দিবসেও সাইকেল চালাব, সাইকেল চালিয়ে পরিবেশ রক্ষার বার্তা দেব । কিন্ত তথাকথিত সভ্য, উন্নত ও দ্রুতগতির সমাজ গড়ে তোলার জন্য সাইকেল বিমুখ হয়ে পড়েছি তথা প্রতিমুহূর্তে আমরা পরিবেশকে ধ্বংস করে চলেছি ।
২০১৮ সালে ইউনাইটেড নেশন্স এর সাধারণ পরিষদ ৩ রা জুনকে বিশ্ব সাইকেল দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। বাস্তবিক সাইকেল একটি অত্যন্ত সহজ সরল, নির্ভরযোগ্য, সাশ্রয়ী এবং সর্বোপরি পরিবেশ বান্ধব একটি পরিবহন । আমরা গ্রাম শহর মফস্বল সব জায়গাতেই নিশ্চয়ই ডাব বিক্রেতাদের দেখেছি সাইকেলের দুপাশে সাইকেলের থেকেও বেশি ওজনের ডাব বেঁধে নিয়ে সাইকেল চালিয়ে ডাব বিক্রি করছেন । কত সুন্দর প্রযুক্তি ! কতটাই পরিবেশ বান্ধব ! এছাড়াও মাছ বিক্রেতা, আখ বিক্রেতাদের সচরাচর দেখা যায় সাইকেলে করে পাড়ায় পাড়ায় বা ছোট ছোট বাজারে বিক্রি করতে । তবে দুঃখের বিষয়, ক্রমশ আমরা এতই দ্রুতগতির সমাজে প্রবেশ করছি যে সাইকেলকে আমরা বাতিলের খাতায় লিখতে চলেছি ।
জোরে আরও জোরে :
আধুনিক তথা দ্রুতগতির সমাজ জীবনের সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য দ্রুতগতির মোটরসাইকেল অনেকটাই সাইকেলের জায়গা নিয়ে বসেছে। যদিও তুলনামূলকভাবে সব ক্ষেত্রেই মোটরসাইকেলের থেকে সাইকেল অনেকটাই এগিয়ে, যেমন দামেও অনেকটাই কম, ওজনে অনেক হালকা, কোন জ্বালানি লাগেনা, পরিবেশকে কোন রকম দূষিত করে না, খুব সহজেই মেরামত করা যায় ইত্যাদি । শুধুমাত্র গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাইকেল পেরে উঠবে না মোটরসাইকেলের সাথে। এর সাথে এটাও অনস্বীকার্য, সাইকেল চালালে যে শারীরিক ব্যায়াম হয় সেটা মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে কখনোই সম্ভব নয় ।
অজুহাত আর নয় :
অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজন ছাড়াও মোটরবাইক বা মোটর গাড়ির ব্যবহার হতে দেখা যায়। সুনির্দিষ্ট প্রয়োজন ছাড়া বা কারণ ছাড়া মোটরসাইকেলে বা মোটর গাড়িতে যাতায়াত করা আইনত যদি অপরাধযোগ্য করা হয় অথবা আমরা যদি সেই জায়গায় পৌঁছাতে পারি, সেই সচেতনতা গড়ে তুলতে পারি যে আমরা পরিবেশকে ভালো রাখতে, নিজে সুস্থ থাকতে প্রয়োজন ছাড়া মোটরসাইকেল বা মোটরগাড়ি কখনোই ব্যবহার করব না, তবেই সাইকেলের ব্যবহার বাড়তে পারে এবং অনেকগুলি লাভ একসাথে হতে পারে ।
আমার জ্ঞাতব্য, চুয়াল্লিশ বছর বয়সের এক ব্যক্তিকে তার কর্মস্থলে নিত্যদিনই জবাব দিতে হয়, কেন উনি রোজ পাঁচ কিলোমিটারের বেশি পথ সাইকেল চালিয়ে কর্মস্থলে আসেন? এই প্রশ্নটা কি কখনই যুক্তিযুক্ত হতে পারে ।
কেন সাইকেল চালাবো ?
সহজেই বুঝতে পারছি, কেন সাইকেল চালাবো ? প্রথমত – পরিবেশ দূষণ আটকাতে পারব,
দ্বিতীয়ত – শরীর সুস্থ রাখতে পারব,
তৃতীয়ত – জীবাশ্ম জ্বালানির খরচ কমাতে পারব,
চতুর্থত, ব্যয় সংকোচ করা যাবে,
পঞ্চমত, দুর্ঘটনা ঘটলেও কম গতির কারণে ক্ষতির পরিমাপও অনেক কম হবে,
ষষ্ঠত, যানজটও অনেক কম হবে রাস্তায় এবং আরও অনেক কিছুই।
আমরা প্রতি বছরই ঘটা করে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করি । ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসের আগে ৩ রা জুন বিশ্ব সাইকেল দিবস একটা প্রকৃত মহড়া, সঠিক বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপনের ।
তাই আসুন আমরা সাইকেলকে আবার ঘরে ঘরে পৌঁছে দেই, সাইকেল চালানোকে উৎসাহিত করি এবং আমরা নিজেরাও প্রতিদিন সাইকেল চালাই ।
[পাঠকের প্রতি বিশেষ অনুরোধ লেখাটি পড়ে আপনার মূল্যবান মতামত অবশ্যই কমেন্ট বক্সে দেবেন ।]
পান্না মানি, বিজ্ঞানকর্মী, সাইকেল প্রেমী ও সাইকেল চালক।
Mobile : 9433869718
e-mail : mani_pannalal@rediffmail.com
ছবি সৌজন্য: সেভ জলঙ্গী, জলঙ্গী নদী সমাজ ও নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও