
প্রাক্কথন
ভারতবর্ষ-জুড়ে গণতন্ত্রের রথচক্র কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত ধাবমান। রাজনৈতিক দলের সেনাপতি থেকে সেনা প্রত্যেকেরই মুখে প্রতিশ্রুতির বন্যা। আর ভারতের আপামর জনগণ সেই প্রতিশ্রুতির আবর্তে প্রায় দিশেহারা। এমত পরিস্থিতিতে লাদাখ-এ পরিবেশ-যোদ্ধা সোনম ওয়াংচুক লাদাখ হিমালয়ের জলবায়ু ও পরিবেশ সংরক্ষণের প্রশ্নে অনশন শুরু করেছেন, যার পোশাকি নাম জলবায়ু-অনশন (ক্লাইমেট-ফাস্ট)। পরিবেশের ব্যাপারে অনশন বা অনশনরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ, আগেও ভারতের মানুষ দেখেছে। তা সত্ত্বেও অবস্থার বিশেষ কিছু পরিবর্তন ঘটেছে, এমনটি ভাবার কোন কারণ নেই। পরিবেশ-যোদ্ধা ওয়াংচুক-এর জলবায়ু-অনশনের সমর্থনে চন্দননগর ‘পরিবেশ আকাদেমি’র পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করা হয়েছে ওয়াংচুকের হিমালয় সংরক্ষণ সংক্রান্ত দাবিগুলিকে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে সমস্যার সমাধান করার জন্য। বিভিন্ন জায়গায় ওয়াংচুকের সমর্থনে সভা-সমিতিও হচ্ছে। কিন্তু এই সভা-সমিতির মধ্যে একটি ভাবনার পার্থক্য থেকে যাচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, হিমালয়ের সমস্যাটি কেবল ওই অঞ্চলের। হিমালয়ের জলবায়ু ও পরিবেশ সমস্যার গভীরতা সম্ভবত ভারতের মানুষ এখনও বুঝে উঠতে পারছে না।
হিমালয়ের জলবায়ু ও পরিবেশ সংরক্ষণ এক আন্তর্জাতিক বিষয়। এর সংরক্ষণে যুক্ত দক্ষিণ-এশিয়ার সমস্ত দেশ। কিন্তু সমস্যার গভীরতা নিয়ে আমরা কেউই চিন্তিত নই। রাজনৈতিক দলগুলিরও এই সমস্যা সংক্রান্ত ভাবনাচিন্তা প্রায় নেই বললেই চলে। অন্তত সাম্প্রতিক কালে যেসব নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশিত হয়েছে, তাতে পরিবেশ বিষয়ে কিছু কথা থাকলেও এটা স্পষ্ট যে, রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচনী ইস্তাহার তৈরি করার সময় পরিবেশ নিয়ে যে হোম টাস্ক করার কথা ছিল, সেটা করেনি। অথচ এই নির্বাচনের সময়েই পরিবেশ-যোদ্ধা ওয়াংচুক-এর দ্বারা হিমালয়ের পরিবেশ সমস্যাটি ভারতবাসীর সামনে এল। আগামী দিনে সমস্ত ভারতের সুস্থ প্রাকৃতিক পরিবেশে বেঁচে থাকার প্রাণভোমরা লুকিয়ে রয়েছে হিমালয়ের জলবায়ু ও পরিবেশ সংরক্ষণের ওপর।
হিমালয়ের প্রকৃতি
হিমালয় পৃথিবীর নবীনতম ভঙ্গিল পর্বতশ্রেণি। হিমবাহের অবক্ষেপ দিয়ে গড়া এর পাহাড়ি ঢাল এখনও সুস্থিত নয়। এ অঞ্চলের মাটি আলগা, ঝুরঝুরে। ফলে মাটির ক্ষয় বেশি। অঞ্চলটি ভূমিধসপ্রবণ। সবচেয়ে বড় বিপদের কথা হিমালয় এক উচ্চ-ভূকম্পপ্রবণ অঞ্চল। এসবের সঙ্গে যোগ হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অ-মরশুমি চরম বৃষ্টিপাত। ভূউষ্ণায়নের ফলে হিমালয়ের অধিকাংশ অঞ্চলে উষ্ণতা বৃদ্ধির হার বাস্তবিকভাবে শীতকালে বেশি হয়েছে। ফলে হিমবাহের গলন বেড়েছে। গঙ্গা নদীর উৎস গঙ্গোত্রী হিমবাহ গলে প্রতি বছর প্রায় ৯-২০ মিটার পিছিয়ে যাচ্ছে। এতে হিমবাহের ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে এবং বরফের ধস নামছে। হিমবাহের অত্যধিক গলনে অবক্ষেপ-ঘেরা হিমবাহ হ্রদের সৃষ্টি হয়। ভূ-আলোড়নে এগুলো ফেটে গিয়ে ভয়ংকর হড়পা বানের মতো এসব হ্রদের জল সমতলে নেমে আসে। এরকমই এক ঘটনা ঘটেছিল আমাদের পড়শি রাজ্য সিকিম-এ বিগত ৩ অক্টোবর, ২০২৩, মাঝরাতে লোনাক হিমবাহ হ্রদের অবক্ষেপ-ঘেরা দেওয়াল ফেটে গিয়ে।
ভারতের আবহাওয়া দপ্তর জানাচ্ছে, বিগত শীতে পুরো হিমালয় অঞ্চলটি শুকনো ছিল। তুষারপাত তো হয়ইনি, এমনকী বৃষ্টিপাত ছিল স্বল্প বা শূন্য। কাশ্মীরে শ্রীনগর-এ ডিসেম্বরের শেষে এবং গুলমার্গ-এ মধ্য-জানুয়ারিতেও বরফ দেখা যায়নি। পশ্চিম হিমালয়ে বিগত ডিসেম্বরে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৮০ শতাংশ কম বৃষ্টি/তুষারপাত হয়েছে। এই শুকনো শীতকালের প্রভাব হিমালয়ের উচ্চাংশে কৃষিকাজ, জলসম্পদ, মানুষের জীবনযাত্রা এবং সর্বোপরি বাস্তুতন্ত্রের উপর গভীরভাবে পড়ে। ফরেস্ট সার্ভে অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং জম্মু ও কাশ্মীরে শুকনো বনভূমিতে দাবানলের ঘটনা অনেক বেড়েছে।
হিমালয় অঞ্চলটি তাই পলিগঠিত সমভূমি বা কঠিন শিলায় গড়া ভারতীয় উপদ্বীপীয় অঞ্চল থেকে আলাদা। এইরকম অঞ্চলে কোন পরিকল্পনা হাতে নেবার সময় আমরা এর বাস্তুতান্ত্রিক স্বাতন্ত্র্য এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তির কথা মাথায় রাখি না। উন্নয়নের নামে আমরা নানান উদ্ধত নির্মাণকার্য করি। এ কথা বলার মানে এই নয় যে, হিমালয়ের ১২টি রাজ্য ও ১টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে কোনরকম নগরায়ন, রাস্তাঘাট তৈরি, আবাসন প্রকল্প, পর্যটন বিকাশ, জলনিকাশী ব্যবস্থা, পানীয় জল সরবরাহের মতো কোনো পরিকাঠামো গড়ে উঠবে না। এসবই হবে অঞ্চলটির ভূতাত্ত্বিক গড়ন ও ধারণক্ষমতার কথা মাথায় রেখে। ভুললে চলবে না এই ১৩টি রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বেশ কয়েকটি নামী পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে যেগুলো ভয়ানক ভূমিধসপ্রবণ। এসব পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে কুলু, শিমলা (হিমাচল প্রদেশ), চামোলি (উত্তরাখণ্ড), গ্যাংটক (সিকিম) এবং আমাদের রাজ্যের দার্জিলিং অতিমাত্রায় ধসপ্রবণ। হিমালয়ের এই তেরোটি রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ২০০৭ সালে যেখানে ভূমিধসের মোট ঘটনা ছিল ৫২টি, ২০১৭ সালে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১৮৫টি।
কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা
কেন্দ্রীয় আবাসন এবং নগর বিষয়ক মন্ত্রকের অধীনস্থ ‘টাউন অ্যান্ড কান্ট্রি প্ল্যানিং অর্গানাইজেশন’-এর তথ্য বিশ্লেষণ করে ডাউন টু আর্থ জানাচ্ছে, হিমালয়ের উপরিউক্ত ১৩টি রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে অবস্থিত কোনও টিয়ার-১ শহর (আদমশুমারি, ২০০১ অনুযায়ী জনসংখ্যা এক লক্ষের বেশি) অথবা মেট্রো-শহর (জনসংখ্যা ১০ লক্ষের বেশি) — কারোরই অপরিকল্পিত উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ করার কোন মাস্টার প্ল্যান নেই। ২০২৪ সালের ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী কারগিল ও লেহ্ (লাদাখ), কুলু (হিমাচল প্রদেশ), শিলং (মেঘালয়), ইটানগর (অরুণাচল প্রদেশ), কোহিমা ও ডিমাপুর (নাগাল্যান্ড), ইম্ফল (মনিপুর) এবং আইজল (মিজোরাম) – মাত্র এই আটটি শহর কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্প ‘অটল মিশন ফর রেজুভিনেশন অ্যান্ড আরবান ট্রান্সফর্মেশন’-এর অধীনে তাদের খসড়া মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছে।
আক্রান্ত হিমালয়
এখানে একটা কথা বলার, ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের গোড়ায় জোশিমঠ-এর ভূমিধস কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। হিমালয়ের কোলে অবস্থিত ভারতের সব কটি রাজ্যেই এই ছবি চোখে পড়ে। হিমালয়ের উপর নানাপ্রকার অত্যাচার এখনও চলছে। অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য এ অঞ্চলে যেসব প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে, সেগুলো কখনোই বাস্তুতান্ত্রিকভাবে টেকসই ও ন্যায্য নয়। উত্তরাখণ্ডের তেহরি জেলার চাম্বা, কর্ণপ্রয়াগ, নৈনিতাল সহ উত্তরাখণ্ডের বহু বাড়ি, রাস্তায় ক্রমাগত ভূমিধসের ফলে বড় ফাটলের সন্ধান পাওয়া গেছে। উত্তরাখণ্ডে যত্রতত্র জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়া, অবাধে বনাঞ্চল ধ্বংস করে, পাহাড় ফাটিয়ে ও নদীর স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ করে নদীর পাড় বরাবর বড় চওড়া রাস্তা তৈরি, ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা হোটেল, রিসর্ট ও বাড়ি, অলকানন্দা নদীর দুপারের নুড়ি-পাথর ও মাটি তুলে নেওয়া ইত্যাদির ফল আজকের এই বিপর্যয়। এই এলাকাগুলির অবস্থাও জোশিমঠের মতোই হবে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। এর সঙ্গেই তৈরি হবে পরিবেশ শরণার্থীদের সমস্যা। স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কগ্রস্ত উত্তরাখণ্ডের মানুষ। তবে সাধারণ মানুষের আতঙ্ক কিংবা বিশেষজ্ঞদের চেতাবনি কোনদিনই দমাতে পারেনি কিছু মানুষের সর্বগ্রাসী লোভ। টলাতে পারেনি প্রশাসনিক ঔদাসীন্য। পারলে আমরা ভুলতে পারতাম না ২০১৩-র কেদারনাথ-এর মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা। উল্লেখ্য, আমাদের দেশের সিন্ধু সভ্যতার পতনের জন্যও কিন্তু বেশিরভাগ ঐতিহাসিক পরিবেশের অবক্ষয়কেই দায়ী করেছেন।
উত্তরাখণ্ড রাজ্য জুড়ে বর্তমানে ৪০,০০০ কিলোমিটার রাস্তা আছে। ২০০০ সালে যখন এটি পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা পায়, তখন রাজ্যটি জুড়ে রাস্তা ছিল ৮,০০০ কিলোমিটার। প্রতি কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে ২০-৬০,০০০ ঘনমিটার রাবিশ সৃষ্টি হয়। এর মানে, ২০০০ সাল থেকে এই রাজ্যে রাস্তা তৈরির ফলস্বরূপ প্রায় ২০ লক্ষ ঘনমিটার রাবিশ সৃষ্টি হয়েছে। আর এই রাবিশ জমা করা হয়েছে পাহাড়ি ঢালে। পাহাড়ি ঢাল বেয়ে এবং বৃষ্টির জলে ধুয়ে তা জমেছে নদীর বুকে। ফলে নদীগুলি ক্রমশ অগভীর হয়েছে। পাহাড়ি গাছপালাও এর ফলে ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে এইচ এন বি গাড়োয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ এস পি সাটি জানিয়েছেন। আরও একটি দুশ্চিন্তার বিষয় হল এই রাজ্যের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩১.৭ শতাংশ নিকাশী ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত।
এবারে হিমালয়ে অবস্থিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কথা ধরা যাক। হিমালয়ের বরফ গলা জলে পুষ্ট বেগবতী ও দীর্ঘ নদীগুলি নির্মল শক্তি জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উপযুক্ত হলেও এ প্রশ্ন থেকেই যায় যে, কতগুলি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এখানে করা উচিত? কীভাবেই বা গড়ে ওঠা প্রকল্পগুলির ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব? প্রকল্পগুলি গড়ে তোলার সময় এই উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক এবং ভূমিরূপগত অবস্থার কথা বিবেচনায় ছিল তো? আরও বলার যে, এ অঞ্চলের দীর্ঘকালীন বন্যার তথ্য নদীগুলির চরিত্র বিশ্লেষণে অতি জরুরি বলে জানাচ্ছেন বিশিষ্ট ভূতত্ত্ববিদ নবীন জুয়াল। কারণ সেইমতো তবে নদীশাসন করার পরিকল্পনা নেওয়া উচিত।
ভারতের মোট ৮১টি বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ভূকম্পপ্রবণ হিমালয়ের কোলে ১৩টি রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে অবস্থিত। এখানে আরও ২৬টি প্রকল্পের কাজ চলছে। উল্লেখ্য, ২০০৭-১৭ সালের মধ্যে এসব অঞ্চলে ১,১২১টি ভয়াবহ ধস নেমেছে (লাদাখ-এ ২৩টি, জম্মু ও কাশ্মীর-এ ২৩৮টি, উত্তরাখণ্ড-এ ২০৬টি, হিমাচল প্রদেশ-এ ১৭৭টি, অরুণাচল প্রদেশ-এ ৭২টি, সিকিম-এ ৫০টি, অসম-এ ৮৯টি, নাগাল্যান্ড-এ ৮৮টি, মেঘালয়-এ ৩৮টি, ত্রিপুরা-য় ৫টি, মিজোরাম-এ ৩৬টি এবং মনিপুর-এ ৯৯টি)। এমন বিপর্যয়ের পরেও আরও ৩২০টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হিমালয়ের কোলে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গ দার্জিলিং
আমাদের রাজ্যের দিকে তাকালেও দেখা যাবে আমরাও দাঁড়িয়ে আছি এক ভয়ংকর খাদের কিনারায়। দার্জিলিং, কার্শিয়ং, কালিম্পং প্রভৃতি এলাকায় অবাধে চলছে যত্রতত্র হোটেল নির্মাণ, চলছে পাহাড় ফাটানো এবং গাছ কাটার মতো পরিবেশ অপরাধ। দার্জিলিঙে ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ১০০টি ভূমিধস, ঘূর্ণিঝড় সহ ১৩৮টি প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটেছে। ২০২১ সালে ‘যশ’ ঘূর্ণিঝড়ে এবং বর্ষাকালে অতি ভারী বৃষ্টিতে এখানে ভয়ানক ভূমিধস নামে। ২৭০টি স্থান জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এই ঘটনার কয়েক বছর আগে ২০১৫ সালে দফায় দফায় ভূমিধসে ৩৮ জন মানুষ মারা যায়। আহত হয় প্রচুর। আমাদের দেশে যেসব জায়গায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়, দার্জিলিং তাদের মধ্যে একটি। এখানকার মাটিরও জলধারণ ক্ষমতা অত্যন্ত কম। তাই এখানে ভূমিধস বেশি বলে জানাচ্ছেন ভূতত্ত্ববিদেরা। এর ওপর রয়েছে পরিকল্পনাশূন্য নগরায়ন। এখানকার ৬৫ ডিগ্রি খাড়াই পাহাড়ি ঢালেও গড়ে উঠছে বহুতল। এর ফলে নদীগুলি অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছে। ভূমিধস বাড়ছে। অবশ্য গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে বলা হয়েছে যে দার্জিলিঙে এখন আর বহুতল গড়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। এর সঙ্গেই রয়েছে পর্যটকের চাপ এবং বর্জ্য সমস্যা। এখানে উল্লেখ করা জরুরি যে, হিমালয়ের ১৩টি রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভূমিধসজনিত ক্ষয়ক্ষতি ও মানুষের মৃত্যুর কারণে মহামান্য সর্বোচ্চ আদালত ২০২৩ সালের অগাস্ট মাসে এখানকার শহর ও নগরগুলির ধারণক্ষমতা পুনর্মূল্যায়ন করতে এক আলোচনা করার আদেশ জারি করেন।
অতঃকিম্
আমরা তবে কী করব? কী রেখে যাব আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য? নিশ্চিত মৃত্যুর ঠিকানা? গুটিকয়েক মানুষের অদম্য লোভ এবং প্রশাসনের অমার্জনীয় নির্লিপ্ততার হাতে নিজেদের এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের ভাগ্য বন্ধক রেখে হাতপা গুটিয়ে বসে থাকব? নাকি প্রশাসনকে সচেতন করব উন্নয়নের অজুহাতে, কেবল ব্যবসায়িক স্বার্থে যেন কোনখানেই কোনওরকম অবৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ড না ঘটে, সেদিকে লক্ষ রাখতে। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন- ‘প্রকৃতিকে অতিক্রমণ কিছুদূর পর্যন্ত সয়, তার পরে আসে বিনাশের পালা।’ আমরা বহুপূর্বেই পার করে এসেছি সেই সীমা। এখন শুরু হয়ে গেছে প্রকৃতির প্রতিশোধ, আমাদের বিনাশের পালা। উন্নয়ন ও নগরায়নের নামে গোটা হিমালয় যে ভাবে খুন হয়ে চলেছে, পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের কথাকে মান্যতা দিয়ে সে পরিবেশ অপরাধ বন্ধ করতেই হবে। হিমালয়ে প্লাস্টিকের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। নতুন করে গাছ লাগাতে হবে। এই কাজের দায়িত্বে থাকবেন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার সহ এলাকার সাধারণ মানুষ ও আঞ্চলিক উন্নয়ন পর্ষদগুলি। নাহলে আমাদের রাজ্য সহ সমগ্র দেশেই একের পর এক আরও জোশিমঠের ঘটনা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।
……………………………………………………………………………………………………………………………………………..
বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়, পরিবেশ ও সমাজকর্মী, চলভাষ- ৮৪২০৭৬২৫১৭, ই-মেল: biswajit.envlaw@gmail.com
ও
রাহুল রায়, পরিবেশকর্মী, চলভাষ- ৮৬১৭৭৪৫৩৪০, ই-মেল: rayrahul2263@yahoo.co.in
……………………………………………………………………………………………………………………………………………..