
শুরুকথা
উত্তর, হ্যাঁ বললে, সঠিক বা বিজ্ঞান সম্মত উত্তর হবে না । কারন শাঁখের করাত দুদিকে কাটে । অর্থাৎ দু দিকের ক্ষতি। কিন্তু শাঁখের করাত দিয়ে শাঁখা বা অলঙ্কার তৈরি হয়। এটা লাভ । তেমনি ঘুমের ওষুধ আমাদের লাভ দেয় আবার লোকসান করে । যা অবশ্য সব ওষুধের ধর্ম ।
বরং বলা যেতে পারে নিদ্রাহীনতায় ঘুমের ওষুধ খেলে যেমন লাভ ও লোকসান রয়েছে, তেমনি ওষুধ না খেলেও লাভ ও লোকসান আমাদের পাওনা ।
বিভিন্ন ধরনের সামাজিক, অর্থনৈতিক, শারীরিক, মানসিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সমস্যায় পড়ে মানুষের ঘুমের ব্যাঘাত বা নিদ্রাহীনতা ঘটে । অনেক সময় হতাশা, উদ্বেগ, ভয়, শারীরিক কষ্ট, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্রিয়জনের মৃত্যু, দুর্ঘটনা, নিরাপত্তাহীনতা, অর্থনৈতিক ভাবে দেউলে হওয়া, ধর্ষণ, যুদ্ধ, জাতিদাঙ্গা, মৃত্যু ভয়, কাজের সময় পরিবর্তন, গৃহহীনতা, বন্দীথাকা, ডিভোর্স, বন্ধ্যাত্ব ইত্যাদি থেকে ঘুম না হতে পারে। সব ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানের জন্য ঘুমের ওষুধ প্রয়োজন হয় না । অনেক সময় সমস্যা নিয়ে বোঝানো বা কাউন্সেলিং ঘুমের সমস্যা মেটাতে পারে ।
আমরা এবার শারীরবৃত্তীয় ভাবে ঘুমের প্রয়োজন ও অপ্রয়োজন গুলো জেনে নেব ।
মানুষ ঘুমোয় কেন
ঘুম এক ধরনের অজ্ঞান না হওয়া বিশ্রাম। প্রকৃতিতে যে কোনো জীবের বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের দরকার। জীব জগতের মধ্যে গাছপালা, প্রাণীজগত, ছত্রাক, সায়ানো ব্যাক্টেরিয়া সবাই ঘুমোয়।
প্রকৃতিতে যে কোনো জীবনই চলমান। প্রতি মুহূর্তে জীবন নিজেকে বদলাচ্ছে। নতুনের মুখোমুখি হচ্ছে । অর্থাৎ জীবনের মধ্যে ‘নেতিকরণের নেতিকরণ’ ঘটে চলেছে । প্রকৃতির নিয়মে জীবনকে সবসময় চলমান রাখা সম্ভব না । কখনো তাকে ক্ষণিকের জন্য স্থির হতে হয়। বা ধীরে ধীরে চলতে হয়ে। সমগ্র জীবনকালে মানুষ এক তৃতীয়াংশ সময় ঘুমিয়ে কাটায় ।
এক কোষী প্রাণ থেকে সংগঠিত বহু কোষী প্রাণে ঘুমের রূপ আলাদা। ঘুমের সাথে স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকলাপ অবিচ্ছেদ্য। এক কোষী প্রাণে আলাদা স্নায়ুতন্ত্র থাকে না। বিশেষ ধরনের রাসায়নিক ক্রিয়াকলাপ ক্ষণিকের জন্য ধীর হয় বা বন্ধ থাকে । কিন্তু মানুষের মতো উন্নত জীবের স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকলাপ ঘুমকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ।
মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপের সাথে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ জড়িত। জে.ভি. স্তালিনের শিক্ষামালা থেকে আমরা জেনেছি, “মস্তিষ্ক হচ্ছে বস্তুর সবচেয়ে উন্নত রূপ ।”
যে সমস্ত বস্তু দিয়ে প্রকৃতির যে কোনো জীবন গঠিত সেই এক ধরনের বস্তু দিয়েই মস্তিষ্ক গঠিত। কেবল বস্তুগুলোর ধর্ম, গুণ, রূপ, গন্ধ আলাদা। মস্তিষ্কের বস্তুগুলোর মধ্যে অনেক বস্তু সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত। যেমন বিভিন্ন ধরনের শর্করা, চর্বি, প্রোটিন, লবণ, ভিটামিন সহ জল ইত্যাদি অসংখ্য জৈব-অজৈব বস্তু রয়েছে মস্তিষ্কের বস্তুগত গঠনে। জৈব রাসায়নিক পদার্থগুলোর মধ্যে অ্যাসিটাইলকোলিন, অ্যাড্রেনালিন, নর- অ্যাড্রিনালিন, ডোপামিন, গাবা(GABA) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এদেরকে ‘স্নায়ু প্রেরক’(Neurotransmitter) বলা হয়।
ঘুম হয় না কেন
ঘুম বা বিশ্রাম সমার্থক নয়। তবে ঘুম শরীরকে সবচেয়ে ভালো বিশ্রাম দেয়। ঘুম ছাড়া জীব বাঁচতে পারে না। টানা চার-পাঁচদিন ঘুম না হলে মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে। মানুষটা পাগল হয়ে যায়।
মস্তিষ্কের বস্তুসমূহের জটিল রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জীবের জেগে থাকা আবার ঘুমোনোর ঘটনা ঘটে। মস্তিষ্কের জটিল রাসায়নিক ক্রিয়াকলাপের ছন্দপতন ঘটলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। এক কথায় মস্তিষ্কের চলমানতার ছন্দপতন। মস্তিষ্কের রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়ার গোলযোগ হচ্ছে প্রধান কারণ। আর এই অভ্যন্তরীণ কারণকে সক্রিয়া করে তোলে সামাজিক কারণ।
মানুষের বিভিন্ন বয়সের ঘুম
যুবকদের ঘুমের পরিমাণ বয়স্কদের তুলনায় বেশি। কারণ হিসেবে বলা হয়, যুবকদের দৈহিক কাজের পরিমাণ বেশি হওয়ার ফলেই বেশি ঘুমের দরকার হয়। নবজাতকরা ষোলো থেকে আঠেরো ঘণ্টা ঘুমোয়। এখানে শিশুদের দেহের কোষ- কলার দ্রুত বৃদ্ধি মস্তিষ্ককে বেশি বিশ্রাম দেয়।
দেখা গেছে, আট ঘণ্টা ঘুমের মধ্যে সাড়ে ছ’ঘণ্টা গাঢ় ঘুম আর দেড় থেকে দু’ঘণ্টা হালকা ঘুম হয়।
ঘুমের বিভিন্ন স্তর রয়েছে। মস্তিষ্কের ও অন্যান্য অঙ্গের কার্যকলাপের ভিত্তিতে জেগে থাকা অবস্থা থেকে ঘুম পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে ভাগ করা হয়। গাঢ় ঘুমকে গভীরতা অনুযায়ী চার স্তরে ভাগ করা হয়। আর হালকা ঘুমের মধ্যে মানুষ স্বপ্ন দেখে।
ঘুমের গোলযোগ বা ঘুমের রোগ
ঘুম জীবনের স্বাভাবিক ঘটনা। কত রকমের ঘুমের গোলযোগ হতে পারে তা নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা হয়েছে। ঘুমের গোলযোগের শ্রেণীবিন্যাস নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন সমস্যা। তবে মোটামুটি ভাবে দু’ধরনের গোলযোগের কথা বলা হয়ে থাকে।
প্রথম দলের ঘুমের গোলযোগের মধ্যে নিদ্রাহীনতা, বেশি ঘুম এবং ঘুমোতে যাওয়া বা ঘুম থেকে ওঠার সমস্যা।
নিদ্রাহীনতা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘটনাবলী এবং সামাজিক কারণে। যদিও সামাজিক কারণ অভ্যন্তরীণ কারণকে সক্রিয় করেই নিদ্রাহীনতা ঘটায় । যা বিভিন্ন রূপে প্রকাশ ঘটে। ঘুমোতে দেরি হওয়া, ঘুম গাঢ় না হওয়া, যথেষ্ট সময় ঘুমিয়ে না থাকা ইত্যাদি। দেখা গেছে সারা বিশ্বে ১৫-৩০% মানুষ নিদ্রাহীনতায় ভোগেন। এই মানুষদের ঘুমের ওষুধ দরকার হয়।
দ্বিতীয় দলের ঘুমের গোলযোগের মধ্যে রয়েছে, জেগে ঘুমোনো, ঘুমোতে ঘুমোতে কথা বলা, ঘুমের মধ্যে ভয় পাওয়া, ঘুমের মধ্যে প্রস্রাব করে ফেলা ইত্যাদি। বাচ্চারা যে ঘুমের মধ্যে দাঁত কিড়মিড় করে তাও এক ধরনের ঘুমের গোলযোগ।
ঘুমের ওষুধ
মানুষের ঘুমকে ঘিরে সমস্যা প্রকৃতিতে মানুষের জন্মলগ্ন থেকে। কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীর আগে অবধি ঘুমের আধুনিক ওষুধ অজানা ছিল।
যেহেতু ঘুম না হওয়ার কারন ভিন্ন ভিন্ন, সেহেতু ওষুধ গুলোর বিভিন্নতা রয়েছে । ওষুধ গুলোর কাজ, ধর্ম, পার্শ্বক্রিয়া, লাভ, লোকসান ইত্যাদি আলাদা ।
(১) কিছু ওষুধ আছে যারা কেবল ঘুমের জন্য ব্যবহৃত হয়, এদের হিপ্নোটিক্স(Hypnotics) বলা হয় । যেমন ক্লোরাল হাইড্রেট (Chloral hydrate), বার্বিটুরেট(Barbiturate), ক্লোরমেজানন (Chlormezanone), জাপিক্লোন(zopiclone) ইত্যাদি ।
(২)অনেক সময় মনের উদ্বেগ কমলেই ভাল ঘুম হয় । এদের বলা হয় আন্টি-এনজাইটি ড্রাগস(Anti-anxiety drugs) । যেমন ক্লোরডায়াজিপক্সাইড, ডায়াজিপাম(Diazepam), অ্যালপ্রাজোলাম (Alprazolam), লরাজিপাম,(Lorazepam), নাইট্রাজিপাম ইত্যাদি।
(৩) হতাশা কাটানোর ওষুধেও ভালো ঘুম হয় । এদের বলা হয় আন্টি ডিপ্রেসেন্ট(Anti-depressant) । যেমন এমিট্রিপটিলিন (Amitriptyline), ইমিপ্ৰামিন (Imipramine), সারটালিন(sertaline), ফ্লুঅক্সেটিন(Fluoxetine), এসসিটালপ্ৰাম(Escitalopram), ট্রাজোডন(Trazodone), মিয়ানসেরিন(Mianserin) ইত্যাদি ।
(৪) সব মনোবিকারের ওষুধ (Anti-psychotics) দিয়ে মন মেরামতির সাথে সাথে ঘুম হয় । যেমন ক্লোরপ্রোমাজিন (Chlorpromazine), ট্রাইফ্লুপেরাজিন (Trifluperazine), হ্যালোপেরিডল(Haloperidol), থাইওরিডাজোন (Thioridazone), রেশপেরিডন Resperidone) ইত্যাদি ।
১৮৬৯ সালে ক্লোরাল হাইড্রেট ঘুমের জন্য ব্যবহৃত হয়। মূলত মানসিক রোগের ওষুধ হিসেবে।
আধুনিক ওষুধ বিজ্ঞানে, বারবিটুরেটের ব্যবহার ঘটে ১৯০০ সালে। ১৯০৩ সালে বায়ার ওষুধ কোম্পানি (Bayer) প্রথম ভেরনাল (Veronal) বাণিজ্যিক নামে বাজারে আনে । ১৯৫০ সালের মধ্যে বারবিটুরেট ‘নেশার ওষুধ’ হিসেবে পরিগণিত হয় । চিকিৎসা বিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার বিষয় হিসেবে সামনে আসে ।
তারপর ১৯৫০-৬০ সালে ওষুধ বিজ্ঞানে আসে বেঞ্জোডায়াজিপিন (Benzodiazepines) । মানুষের উদ্বেগ কমানো ও ঘুমের জন্য বেশ কার্যকর রাসায়নিক পদার্থ । ১৯৫৯ সালে সুইস বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি রোশ (Roche) লিব্রিয়াম (Librium । Chlordiazepoxide) নামে প্রথম বেঞ্জোডায়াজিপিন বাজারজাত করে ।
বেঞ্জোডায়াজিপিন দলভুক্ত ওষুধ অনেক মানুষের কাছে পরিচিত। বিশ্বে সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত । কমবেশী পঁচিশটি বেঞ্জোডায়াজিপিন চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশন করেন । যেমন ক্লোরডায়াজিপক্সাইড, ডায়াজিপাম, অ্যালপ্রাজোলাম, লরাজিপাম, নাইট্রাজিপাম ইত্যাদি। বর্তমানে এগুলো হচ্ছে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ওষুধ। তবে উদ্বেগ কমানোর জন্যই বেশি ব্যবহৃত হয়। মনে রাখতে হবে উদ্বেগ থাকলে ঘুম ভালো হয় না, আর ঘুম ভালো না হলে উদ্বেগ বাড়ে।
১৯৯০ সালে বেঞ্জোডায়াজিপিন নয় এমন অনেক ওষুধ বাজারে এসেছে। যেমন মিরতাজাপিন, কুইটোপিন ইতাদি।
ঘুমের ওষুধেরপার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
যেহেতু ডায়াজিপাম, অ্যালপ্রাজোলাম, নাইট্রাজিপাম, লোরাজিপাম ইত্যাদি বেনজোডায়াজিপিন-সদস্যরা ঘুমের জন্য বা উদ্বেগ কমানোর জন্য বেশি ব্যবহৃত হয়, তাই আমরা এখানে এদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করব।
ওষুধগুলো যে অভিমুখে কাজ করে উদ্বেগ কমায় বা ঘুম পাড়ায় সেই অভিমুখেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটায়। মস্তিষ্কের বিশেষ ধরনের রাসায়নিক কার্যকলাপকে ধীরগতির বা রুদ্ধ করে। মস্তিষ্কের জেগে থাকা সম্ভব হয় না বা মস্তিষ্ক শান্ত হয়। তাহলে বেশি মাত্রায় শান্ত করার ফলে রোগীর ভাবনা, বিশ্লেষণ, কথাবলা জড়িয়ে যায়। অনেকক্ষণ রোগী ঘুমিয়ে থাকে।
অনেক সময় মস্তিষ্কের রাসায়নিক বিক্রিয়াকে শান্ত করার বদলে উত্তেজিত করে তোলে। তখন মৃগি রোগের মতো ঘটনা ঘটে। একে বলে প্যারাডক্সিক্যাল এফেক্ট।
এছাড়া বেশি ঘুম, খিদে বেড়ে যাওয়া, ওজন বাড়া, মনে রাখার সমস্যাও ঘটতে থাকে। কোন একটি বিষয় সম্পর্কে ধারণাত্মক জ্ঞান অর্জনে ওষুধগুলো বাধা হয়ে দাঁড়ায়। দীর্ঘদিন ব্যবহারে রোগী নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। নেশাগ্রস্ত রোগীর থেকে ওষুধ তুলে নিয়ে রোগী আর এক ধরনের সমস্যায় পড়ে। একে উইথড্রয়াল লক্ষণ বলে ।
ঘুমের ওষুধ ঘিরে সামাজিক সমস্যা
ডায়াজিপাম বা অ্যালপ্রাজোলাম জাতীয় ওষুধগুলো মূলত ব্যবহৃত হয় নিদ্রাহীনতা ও উদ্বেগ কমানোর ওষুধ হিসেবে।
বিশ্বে নির্দিষ্ট তথ্য নেই, তবে কয়েক মিলিয়ন প্রেসক্রিপশনে এই ওষুধগুলো ব্যবহৃত হয়। এদের মধ্যে কতজন বেশি মাত্রায় ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তার তথ্যও অপ্রতুল। সুইডেনের (২০০৩) একটি তথ্য বলছে, ৩৯% আত্মহত্যার ঘটনা ১৯৯২-৯৬-এ ঘটে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে এক প্রাক্তন সাংসদের অ্যালপ্রাজোলাম খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। প্রাক্তন সাংসদ ৩০-৪০টি ০.৫ মি.গ্রা অ্যালপ্রাজোলাম খেয়েছিলেন। এতে ঘুম ঘুম ভাব, কথা বলার সমস্যা ইত্যাদি ঘটেছিল। প্রসঙ্গত প্রাক্তন সাংসদের কোনো ক্ষতি হয়নি।
দেখা গেছে, যুবকদের মধ্যে এই ওষুধে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। এবং যারা হতাশা কাটানোর জন্য খান তাদের ক্ষেত্রে আত্মহত্যার প্রবণতা কম। বা নেই বললেই চলে।
এই জাতীয় ওষুধগুলোর ক্ষতিকারক মাত্রা অনেক বেশি। ওষুধ বিজ্ঞানের ভাষায় ‘কার্যকারিতার জানালা'(Therapeutic Window) বিশাল। অর্থাৎ কার্যকারিতা ও ক্ষতিকর মাত্রার মধ্যে বিশাল ফারাক। অ্যালপ্রাজোলামের ক্ষেত্রে কম-বেশি ১৯০০-২০০০ বড়ি (০.৫ মি.গ্রাম) খেলে দ্রুত মৃত্যু ঘটতে পারে।
বেঞ্জোডায়াজিপিনে আত্মহত্যার ঘটনায় দেখা গেছে, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রধান নয়। মদ খেয়ে বেশি মাত্রায় ওষুধ, বা ওষুধ খেয়ে জলে ডুবে যাওয়া, বা অন্য কোনো ওষুধের (মৃগির ওষুধ) পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সংমিশ্রণে মৃত্যু ঘটছে। এছাড়া রোগের কারণেও অতিরিক্ত বেঞ্জোডায়াজিপিন মৃত্যু ঘটাতে পারে।
ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়াতে সবচেয়ে বেশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মাত্রা দেখা গেছে ফ্লুরাজিপামে।
ঘুমের ওষুধের সমস্যার সমাধান প্রসঙ্গে
(১) একক ভাবে বার্বিটুরেট(Barbiturate) শর্ত সাপেক্ষে সাধারণ বাজারে রাখা উচিত । অর্থাৎ অজ্ঞান করা, খিঁচুনী কমানোর ওষুধ হিসেবে বাজারে রাখা গুরুত্বপূর্ণ ।
(২) বেনজোডায়াজিপিন(Benzodiazepines) দলভুক্ত ওষুধ মারাত্মক উদ্বেগ বা মারাত্মক ঘুমের সমস্যায় ব্যবহার বিজ্ঞান সম্মত । তবে সংক্ষিপ্ত সময় ও সবচেয়ে কম মাত্রায় ব্যবহার করা উচিত । বয়স্কদের জন্য সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে । লাগাতার বা মাসের পর মাস না ব্যবহার করা ভালো ।
(৩) বেনজোডায়াজিপিন(Benzodiazepines) বিক্রিতে সরকারী নিয়ন্ত্রণ খুব গুরুত্বপূর্ণ । খোলা বাজারে বিশেষ নজরদারী প্রয়োজন ।
(৪) উদ্বেগ, নিদ্রাহীনতা ও হতাশার সমস্যায়, স্থানীয় ও জাতীয় স্তরে, বেনজোডায়াজিপিন (Benzodiazepines) ব্যবহারে নির্দিষ্ট নীতিমালা(প্রটোকল) বানানো দরকার । যেখানেই সুযোগ থাকবে, ওষুধ ছাড়া সমাধানের চেষ্টা সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে ।
(৫) সরকারী ও বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মী সংগঠন রোগীদের ঘুমের ওষুধ ব্যবহারে বিভিন্ন ধরনের প্রচার আন্দোলন গড়ে তুলবেন ।
———————————————————————————–
ডা.স্বপন কুমার জানা
সংগঠক । সোসাইটি ফর সোসাল ফার্মাকোলজি ।
মোবাইল : 98308 29020
তথ্য ঋণ : Chetley,A. Problems Drugs, Amsterdam, Health Action International, 1993 । Tales of Dependance ।