
“২১ ফেব্রুয়ারি: আগামী বছরের মধ্যে দেশে যক্ষ্মা দূরীকরণে জোর দিয়েছে কেন্দ্র। সেই জাতীয় কর্মসূচির মধ্যেই প্রাপ্ত বয়স্কদের ফের বিসিজি টিকা (যক্ষ্মা রোধে) দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। চলতি বছরেই, কয়েক মাসের মধ্যে দেশে ‘পাইলট প্রজেক্ট’ হিসেবে ওই কর্মসূচি শুরু হবে বলে বুধবার নয়াদিল্লিতে জানিয়েছেন ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টিবি অ্যান্ড রেসপিরেটরি ডিজিজ’-এর যক্ষ্মা ও বক্ষ রোগের বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক রূপক সিংলা।” – – – তিনি বলেন, “প্রথমে পাইলট প্রজেক্টে প্রাপ্তবয়স্কদের ওই টিকা দিয়ে তার কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করা হবে। বিনা মূল্যেই মিলবে টিকা।”
কাগজটি আরো লিখেছে, – – – – “যদিও প্রাপ্তবয়স্কদের বিসিজি টিকা দেওয়ার বিষয়ে বিতর্কও রয়েছে। বঙ্গের সংক্রামক রোগের চিকিৎসক যোগীরাজ রায় বলেন, “প্রাপ্তবয়স্কদের বিসিজি টিকা নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়েছে।” (আনন্দবাজার। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪)।
বিসিজি টিকার বিজ্ঞান
আধুনিক ওষুধ বিজ্ঞান ইতিহাস প্রমাণ করেছে, বিসিজি টিকা আবিষ্কৃত হয় ১৯২১ সালে। ভারতে নবজাতক ও শিশুদের ১৯৮৫ সাল থেকে সার্বিক টিকাকরণে আসে।
ভারতে যক্ষা রোগ প্রতিরোধে বিসিজি’র ভূমিকা নিয়ে নানা ধরনের গবেষণা হয়েছে। যক্ষা রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বিসিজি’র নেই । তবে মানব শরীরের ‘প্রতিরোধ কারখানা’ এমন ভাবে সেজে ওঠে যা মারাত্মক বা খারাপ ধরনের যক্ষা রোগ (মস্তিষ্কের টিবি, ফুসফুসের মিলিয়ারী টিবি ইত্যাদি) আটকাতে পারে। তাও সমস্ত ক্ষেত্রে এই উপকার পাওয়া যায় না।
এমবিবিএস স্তরে আধুনিক ওষুধ বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ্যপুস্তক লিখেছে,
“BCG has been widely used to enhance resistance to tubercular infection, but doubt has been cast about its utility in adults, though children appear to be benefited.
BCG has also been used to enhance immunity nonspecifically by stimulating the reticuloendothelial system, e.g. as adjuvant in immunotherapy of cancer and some other conditions. It is contraindicated in tuberculine positive individuals, in those with compromised host defence including HIV positive children, and during pregnancy”.(Page : 981। Essentials of MEDICAL PHARMACOLOGY। 8th Edition। 2019। KDTripathi। Jaypee Brothers Medical Publishers)।
খেয়াল করবেন —
(১) টিউবারকুলিন(Tuberculin) পজিটিভ মানুষের ক্ষেত্রে বিসিজি চলবে না(Contraindicated)। আমাদের দেশে কুড়ি বছরের উপর মানুষের কমবেশী নব্বই শতাংশ (৯০%) ক্ষেত্রে টিউবারকুলিন (Tuberculin) পজিটিভ। এই মানুষেরা প্রাকৃতিক ও সামাজিক ভাবে যক্ষ্মার জীবাণু দিয়ে সংক্রমিত হয়েছেন।
(২) বিসিজি টিকা শিশুদের ক্ষেত্রে যক্ষা রোগ প্রতিরোধ করে না। কেবল কিছুটা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে(appears to be benefited)।
(৩) নবজাতক ও শিশুদের বিসিজি টিকা কেবল Tubercular Meningitis বা Milliary Tuberculosis আংশিক ভাবে আটকাতে পারে।
ওঁরা সব জানে
যক্ষা রোগ, বিসিজি টিকা, যক্ষারোগ প্রতিরোধ, যক্ষা নির্মূলীকরণ, যক্ষা রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত আধুনিক ওষুধ ইত্যাদি নিয়ে যাবতীয় আধুনিক তথ্য আমরা জানি, আর ওঁরা জানে না ? ওঁরা অবশ্যই জানে। জেনেশুনেই ‘বিসিজি ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’ করতে চলেছে। এ ভাবেই ওঁরা দেশ থেকে টিবি রোগ তাড়াবে !
দুনিয়াতে যে সমস্ত দেশ যক্ষা রোগকে কমাতে বা তাড়াতে পেরেছে, তা উন্নত ওষুধ বা প্রতিরোধের বিসিজি টিকা দিয়ে নয় ; উন্নত সমাজ ব্যবস্থা দিয়ে। সেখানে জনমানুষের খাওয়া, পরা, থাকা, শিক্ষা ও চিকিৎসার অবাধ স্বাধীনতা অর্জনের পথ মসৃণ করে।
ভারতবর্ষে বিগত সাতাত্তর বছর ধরে ওঁরা যক্ষার বিরুদ্ধে অনেক ‘লড়াই’ করেছে, কিন্তু দেশ থেকে টিবি রোগকে তাড়াতে পারেনি। অপর দিকে প্রতি বছর কমবেশী ছয় লক্ষ যক্ষা রোগীর বাধ্যকরা মৃত্যুর বিনিময়ে আমরা শিখেছি, এ ভাবে যক্ষা তাড়ানো যাবে না।
যক্ষা রোগের যন্ত্রণা ও মৃত্যুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানব সমাজের ইতিহাস সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণ করেছে, জনমানুষের খাওয়া, পরা, থাকা, শিক্ষা ও চিকিৎসার অবাধ স্বাধীনতা অর্জনের রাজপথ দিতে পারে, দেশ থেকে যক্ষা রোগ নির্মূলীকরণের একমাত্র পদক্ষেপ । আর ওঁরা যক্ষারোগ প্রতিরোধ করার জন্য কমবেশী ঊনচল্লিশ বছর পর বিসিজি টিকার ট্রায়াল দেবে !
ওঁদের বিজ্ঞান মনস্কতা বা ভাবনার বিজ্ঞান দেখলে ওঁদের আর “বৈশ্যের ক্রীতদাস” ছাড়া অন্য কিছু বলা যাবে না। সাম্রাজ্যবাদের মরণ যুগে ‘বৈশ্যের ক্রীতদাস’দের বিজ্ঞান চেতনার হাল সত্যি ভয়ঙ্কর। ওষুধ বহুজাতিকদের জন্য জনমানুষের পাকস্থলীর যন্ত্রণা আটকানোর কাজ ওঁরা বিসিজি টিকার প্রচার ও প্রয়োগ দিয়ে করবে ! সাবাস !
টিকা বা ভ্যাকসিন ‘সংস্কৃতি’
কী লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে চিকিৎসক বিজ্ঞানীরা, চলতি বছরেই, কয়েক মাসের মধ্যে দেশে বিসিজির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ‘পাইলট প্রজেক্ট’ হিসেবে ওই কর্মসূচি শুরু করবে । কাজ শুরু হবে বলে বুধবার নয়াদিল্লিতে জানিয়েছেন ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টিবি অ্যান্ড রেসপিরেটরি ডিজিজ’-এর যক্ষ্মা ও বক্ষ রোগের বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক রূপক সিংলা।
ওঁরা জনমানুষের মধ্যে রোগ প্রতিরোধের জন্য টিকা বা ভ্যাকসিন ‘সংস্কৃতি’ গড়তে চায়। ১৯৮৫ সালের আলমা আটা ঘোষণায়, সাম্রাজ্যবাদীদের মদতপুষ্ট সংগঠন ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ বলে ছিলো, ‘২০০০ সালের মধ্যে সবার স্বাস্থ্য চাই’। কিন্তু বাস্তবে শিশুদের টিকাকরণ ও মায়েদের জন্মনিয়ন্ত্রণ ছাড়া কিছুই হয়নি। সম্ভবও ছিলো না। কারন শ্রেণী-সমাজে ‘সবার স্বাস্থ্য’ অসম্ভব ও অবাস্তব।
এ যুগ সাম্রাজ্যবাদের মরণ যুগ ! এ যুগে সাম্রাজ্যবাদীরা মরণ পথে চলেছে ! এই মৃত্যু পথযাত্রী সাম্রাজ্যবাদীরা বাঁচতে চায়। জীবনের স্থায়িত্বকাল বাড়াতে চায়।
সাম্রাজ্যবাদীদের রক্ষা, তাঁদের জীবনের স্থায়িত্বকাল বাড়ানোর দায়িত্ব ঘাড়ে নিয়েছে সরকারের নেতৃত্বে, ‘ক্রীতদাস চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা’ ! এঁরা জনমানুষের মধ্যে ‘টিকা সংস্কৃতি’ গড়ে, অপ্রয়োজনীয় ও অকেজো টিকা বা ভ্যাকসিন বিক্রি করে ওষুধ কোম্পানিদের পুঁজি ও মুনাফার পাহাড় গড়তে সক্রিয় সাহায্য করবে। যেমন ভাবে সাধারণ করোনা ভাইরাস সংক্রমণে (করোনা অতিমারি । ১০ মার্চ ২০২০) ‘গা-জোয়ারী’ ভ্যাকসিন দিয়ে জনমানুষকে টিকা নিতে বাধ্য করে ছিলো।
জনমানুষের মধ্যে ‘টিকা সংস্কৃতি’ গড়ে আড়াল বা অবরুদ্ধ করবে মানুষের খাওয়া, পরা, থাকা, শিক্ষা ও চিকিৎসার অবাধ স্বাধীনতা গড়ার পথকে !
সুসম খাবার ও পুষ্টি ছাড়া যে মানবশরীর প্রতিরোধ গড়তে অক্ষম, তার বিজ্ঞানকে নস্যাৎ করতে চায় ‘টিকা সংস্কৃতি’।
প্রতি বছর বাধ্যকরা অনাহারে আঠারো লক্ষ মানুষের মৃত্যুকে, খাবার না দিয়ে, বিসিজি টিকা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে চায় !
দেশের কমবেশী কুড়ি কোটি মানুষের রাতের অনাহারকে জিইয়ে রেখে, টিকা দিয়ে রোগ প্রতিরোধ করতে চায় ওঁরা !
ওষুধ বিজ্ঞানে প্রমাণিত, যক্ষায় অকার্য্যকর বিসিজি টিকা দিয়ে, প্রতি বছর যক্ষ্মায় কমবেশী ছয় লক্ষ মানুষের মৃত্যু ওঁরা আটকাতে পারবে না !
…………………………………………………………………………………………………………………
স্বপন জানা । ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪। কলকাতা।
সৌজন্য : সোসাইটি ফর সোসাল ফার্মাকোলজি।