Posted on: January 30, 2024 Posted by: Editor Desk Comments: 0
Spread the love

১৩ আগস্ট ১৯৫২। ফ্রান্সের ২১৭০ ফুট গভীর লা ভেরনা গুহায় আটকে পড়েছিলেন গুহা বিশেষজ্ঞ মার্সেল লাউভেন্স এবং তাঁর সহযোগীরা। না, সেই ১১৩৫ ফুট গভীর থেকে মার্সেলকে সেদিন উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ৩৬ ঘণ্টা পর তাঁর মৃত্যু ঘটে। কিন্তু পৃথিবীর চিকিৎসার ইতিহাসে ফ্রান্সের এই ঘটনা স্মরণীয় হয়ে থাকবে, কারণ এই ঘটনায় প্রথম বাইরে থেকে কাউকে রক্তদানের চেষ্টা করা হয়েছিল। প্রচণ্ড কম তাপমাত্রায় মার্সেলের দেহ ঠান্ডা হয়ে আসছিল। ফলে শুরু হয়ে গিয়েছিল রক্তক্ষরণ।

 

দক্ষিণ আমেরিকার মেক্সিকোর লিচুগুইলা গুহা সেদেশের গভীরতম গুহা। সেখানেই নতুন পথ খুঁজতে গিয়ে ১৯৯১ সালে আটকে যান গুহা বিশেষজ্ঞ এমিলি ডেভিস মবলে। বাকি চার বন্ধু বেরিয়ে আসতে পারলেও এক বিরাট পাথরের চাঁই পড়ে তাঁর পায়ের হাড় টুকরো টুকরো হয়ে যায়। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় সমস্ত নড়াচড়া বন্ধ। সুড়ঙ্গ কেটে কেটে ভেতরে ঢুকে তাঁকে উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। সময় লেগেছিল ৯১ দিন।

 

 অস্ট্রিয়ার সীমায় আল্পসের কোলে জার্মানির গভীরতম এবং দীর্ঘতম গুহা, রিসেন্ডিং কেভ। সালটা ২০১৪ এর ৮ জুন। গুহা বিশেষজ্ঞ জন ওয়েস্ট হাউজার ও তাঁর দুই সহযোগী নেমে পড়েছিলেন ৩,৬৬৭ ফুট গভীর এবং ৬৩ হাজার ফুট লম্বা এই গুহায়। ৩,৩০০ ফুট নামার পর হাউজারের মাথায় পড়ল বিরাট এক পাথরের চাঁই। মস্তিষ্কে ট্রমা। সহযোগীদের একজন উঠে আসতে পারলেও বাকিজন আরও গভীরে তলিয়ে যান। সেই গুহাতেই পাশাপাশি সুড়ঙ্গ কেটে ১১ জনকে যাবতীয় সরঞ্জাম-সহ নামানো হয়েছিল। শেষে পৌঁছলেন একজন চিকিৎসক। খাড়াই গুহা বলে কোনও স্ট্রেচার পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়নি। বলতে গেলে দড়ি দিয়ে বেঁধে বেঁধেই ওয়েস্ট হাউজারকে তুলে আনা হয়।

১৯৯৭ সালে মার্কিন মুলুকের আলাবামা স্টেটের ম্যাকব্রাইডস গুহা থেকে উদ্ধার পেলেন জেরাল্ড মনি। মনি এবং তাঁর দল ম্যাকব্রাইডস গুহায় প্রবেশ করেন। কিন্তু আকস্মিক বন্যার কারণে গুহার পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। প্রবল প্রবাহে প্লাবিত একটি গর্ত কীভাবে পেরোবেন, সেই নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করার সময়, জেরাল্ড ভুল করে গর্তে নামার জন্য প্রয়োজনীয় দুটি দড়ির মধ্যে একটিকে ধরেছিলেন। ফলশ্রুতিতে নীচে পড়ে গিয়ে তাঁর ফেমার হাড় ভেঙে যায়। উদ্ধারকারী দল যখন অবশেষে মনির কাছে পৌঁছায়, তখন তাঁকে ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ঠান্ডা জলের সংস্পর্শে রাখা হয়েছিল। ১৮ ঘণ্টা লড়াইয়ের পর জেরাল্ডকে জীবিত অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়।

Rescue workers practice a dry run with one of the capsules that will be used to liberate the trapped miners at the San Jose mine near Copiapo, Chile on October 11, 2010.

 

আল্পস কিংবা হিমালয়, পাহাড় পর্বতের বুক চিরে একের পর এক সুড়ঙ্গ সব ঋতুতে চলার মতো রাস্তা তৈরি হচ্ছে, এর ফলে একের পর এক বিপর্যয় নেমে আসছে বলে মনে করছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। অনেকে অবশ্য বিভিন্ন গুহার নতুন পথ খুঁজতে গিয়েও আটকে পড়েন পাহাড়ি সুড়ঙ্গ পথে। ভারতের ইতিহাসের বৃহত্তম উদ্ধারকার্য সফল হওয়ার পরেও প্রশ্ন থেকেই যায়, এই সমস্ত প্রকল্পের সুরক্ষার মূল্যায়ন কি আদৌ হবে?

                                                                                         – ড. রাতুল দত্ত 


Spread the love

Leave a Comment